মহান স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা প্রদত্ত জীবন বিধান আল ইসলাম। সত্য সুন্দরে সমুজ্জল ও মুক্তির পয়গাম এ দ্বীন ইসলামকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি যুগে যুগে আসমানী কিতাবসহ পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবী-রসূল। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) কেও আল্লাহপাক দিয়েছেন জীবন বিধান আল-কুরআন। এটি আরবী ভাষায় উন্নত বাক-রীতি, অপূর্ব সৌন্দর্য ও সৌকর্যে অবতীর্ণ হয়। আল-কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পরপরই রসূল (সা.) সাহাবীগণকে আল-কুরআনের নিগুঢ় তত্ত্ব বুঝিয়ে দিতেন। ফলে তাঁরা রাসূলের প্রত্যেক নির্দেশনায় আল-কুরআনের অন্তর্নিহিত মর্ম অনুধাবনে সক্ষম হতেন। এভাবে রাসূল (সা.)-এর যুগেই তাফসীর শাস্ত্র নামক এক উন্নত ও গৌরবান্বিত অভিজ্ঞানের গোড়াপত্তন হয় । কুরআন গবেষকদের প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ পর্যন্ত আল-কুরআনকে ঘিরে বিভিন্ন ভাষায় প্রায় ৩,৫০০ উল্লেখযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ প্রণীত হয়েছে। কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন গবেষণার এ ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বাংলা ভাষায় প্রণীত তাফসীর গ্রন্থের সংখ্যা খুবই কম। এ ভাষায় হাতে গোনা দু'চারটি মৌলিক তাফসীর গ্রন্থ রচিত হয়েছে। আর বেশ কিছু প্রামাণ্য তাফসীর গ্রন্থের অনুবাদ হয়েছে। তাই বাংলা ভাষাভাষী লোকদের নিকট আল-কুরআনের অমোঘ বাণীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পৌঁছে দেয়া আজ সময়ের দাবি। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আল-কুরআনের সূরাহ্ ভিত্তিক তাফসীর তাইসীরুত তাফসীর (সূরাহ্ আল-হুজুরাত) প্রকাশের এই উদ্যোগ ।
ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বগুড়া জেলার কাহালু থানাধীন কচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর তিনি মাদরাসায় ভর্তি হন। তিনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল থেকে কামিল পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগসহ মেধাতালিকায় অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ১৯৯০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে বি.এ. অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৯১ সালের এম.এ. পরীক্ষায়ও রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। কলা অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তির স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি দু'টি স্বর্ণপদক ও দু'টি বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বৃত্তি লাভ করেন। ড. বেলাল ১৯৯৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে এ বিভাগে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে কিছুদিন ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ বছর শিক্ষকতার জীবনে পাঠদান ও গবেষণার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সেমিনারেও যোগদান করেন। তিনি মিসর, সৌদি আরব, লেবানন ও ভারতসহ অনেক দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে তাঁর প্রায় অর্ধ শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর প্রকাশিত ও প্রকাশনাধীন গবেষণামূলক গ্রন্থের সংখ্যা ৩১টি। তন্মধ্যে আরবি ভাষায় লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি। ইতোমধ্যে আরবি ভাষায় মিসরের কায়রো ও লেবাননের বৈরুত থেকে তাঁর ৩টি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তাফসীর বিষয়ে অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি মিসরের বিশ্ববিখ্যাত আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে উসূলুদ দীন ফ্যাকাল্টিতে তুলনামূলক ধর্ম বিষয়ে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘ইলমু মুকারানাতিল আদইয়ান: নাশআতুহু ওয়া তাতাওয়ারুহু ওয়া মুসাহামাতু ‘উলামায়িল মুসলিমীন ফীহি। তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক মাস্টার্স থিসিস, এমফিল ও পিএইচডি গবেষণাকর্মের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করছেন।