ফিলিস্তিন, বিশেষ করে গাজা, ১৯৮০ এবং ’৯০-এর দশকে ‘কমলা এবং ছোটগল্পের রপ্তানিকারক’ স্থান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। এ প্রসঙ্গে সমকালীন ফিলিস্তিনি লেখক এবং সম্পাদক আতেফ আবু সাইফ তাঁর সম্পাদিত দ্য বুক অব গাজা : অ্যা সিটি ইন শর্ট ফিকশন সংকলনের ভ‚মিকায় বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের সাহিত্যজীবনে গাজা সবসময়ই একটি কেন্দ্রীয় স্থান দখল করে ছিল।’ এছাড়া ফিলিস্তিনকে ছোটগল্পের দেশ বলার কারণ হয়তো পাওয়া যাবে আরেক ফিলিস্তিনি তরুণ লেখক রেফাত আলারিয়ারের ভাষায় : ‘কখনো কখনো একটি স্বদেশ একটি গল্প হয়ে ওঠে। আমরা গল্প ভালোবাসি, কেননা গল্প আমাদের জন্মভ‚মি সম্পর্কে রচিত হয়েছে এবং গল্পের কারণে আমরা আমাদের মাতৃভ‚মিকে আরও বেশি ভালোবাসি।’ এ কথা সত্যি যে, ফিলিস্তিনি সাহিত্য তার জনগণের জীবন-কাহিনির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং এটি একটি সমগ্র নির্বাসিত জাতির গল্প : শরণার্থী, জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি, উৎখাত, বিভাজন, রাষ্ট্রহীনতা, ক্ষতি, মানসিক যন্ত্রণা, ট্র্যাজেডি, ধ্বংসাবশেষ এবং নীরবতা। যাহোক, অনেকের মতে, ফিলিস্তিনি সাহিত্য আধুনিক বিশ্বের অন্যতম মহান সম্পদ। সমকালীন ফিলিস্তিনি গল্প সংকলনের প্রত্যেক লেখক এবং লেখিকার জন্ম ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ সবারই বয়স পঞ্চাশের নিচে এবং অন্যভাবে বলা যায় যে, তারা সবাই একই প্রজন্মের। উল্লেখ্য, এসব লেখক/লেখিকারা ফিলিস্তিনের (ইজরায়েল অধিকৃত এলাকা ও বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরসহ) অধিবাসী কিংবা বিশ্বের নানান দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরণার্থী বা অভিবাসী। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের যেসব লেখক/লেখিকার জন্ম ১৯৭০ সালের আগে তাদের রচিত সাহিত্যকে ‘আধুনিক ফিলিস্তিনি সাহিত্য’* হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের লেখক, সম্পাদক এবং সাহিত্য সমালোচক তাহসিন ইয়াকিনের মতে ১৯৯০-এর দশকে ফিলিস্তিনি সাহিত্যাঙ্গণে তরুণ লেখক/লেখিকাদের এক নতুন প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটে। সেই সব লেখক/লেখিকারা বিভিন্ন নান্দনিক কলা-কৌশলের মাধ্যমে তাঁদের পরিসীমা প্রসারিত করার চেষ্টা করছেন, বিশেষ করে গদ্যের আঙ্গিকের প্রতি গভীর মনোযোগ দিয়েছেন এবং মানব জগতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছেন। তাদের নিজস্ব ও আলাদা লেখনপদ্ধতি বের করার চেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘এই নতুন প্রজন্ম একটি স্বতন্ত্র সৃজনশীল কণ্ঠস্বর খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন, যা তাদের অনুভ‚তি, চিন্তা ভাবনা এবং জীবন, স্বদেশ, নারীর অবস্থান ও অন্যান্য সমসাময়িক বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির সত্যতা প্রদান করে।’ তিনি আরও বলেছেন, এই লেখক/লেখিকাদের অধিকাংশই এখনো ‘বিদ্রোহ, অনুকরণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং যেকোনো মূল্যে নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণ করার প্রচেষ্টার সঙ্গে লড়াই করছেন।’ এছাড়া তরুণ প্রজন্মের ফিলিস্তিনি লেখক/ লেখিকারা অনেক বেশি সচেতন এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন। তবে তাদের গল্পে আশার আলো স্তিমিত, মাঝেমধ্যে সেগুলো হতাশার ধূসর চাদরে ঢাকা থাকে, এমনকি চরিত্রগুলোর চারপাশের জায়গা আরও সীমাবদ্ধ হতে থাকে বলে মনে হয়।
ফজল হাসান সাহিত্যিক ছদ্মনাম। পােষাকী পরিচয় ড. আফজল হােসেন। মৌলিক ছােটগল্প, অনুবাদসাহিত্য এবং ছড়া রচনায় তিনি ইতােমধ্যে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার নিয়মিত সাহিত্য সাময়িকী ও বিশেষ সংখ্যায় এবং সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনলাইন ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে তার মৌলিক এবং অনুবাদ গল্প । এ পর্যন্ত তিনটি মৌলিক ছােটগল্প এবং পাচটি অনুবাদ গল্পের সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলামাটি অনলাইন ম্যাগাজিনে অস্ট্রেলিয়ার চিঠি শিরােনামে নিয়মিত কলাম লিখছেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসাবে ২০০৬ সালে পেয়েছেন প্রিয় অস্ট্রেলিয়া থেকে ‘প্রিয় লেখক পুরস্কার এবং ২০১০ সালে। ‘বাসভূমি’র পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে পেয়েছেন বাসভূমি পুরস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করার পর ফরেস্ট্রিতে। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সপরিবারে বসবাস করছেন ক্যানবেরায়।