আঁধার পেরিয়ে আসা আলো ‘প্রাণিজগতের দিকে তাকালে দেখব—একটা পাখি ও মাছ সমুদ্র ও মরুভূমির মধ্যে দিয়ে হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তার বাসায় ফেরত যায়; ডিমের মধ্যে জন্ম-নেয়া ছানা ডিমের সেই জায়গাটাতেই ঠোকর দিয়ে ভাঙে, যেটা সবচেয়ে নরম! তাদের ক্ষতগুলো আপনাআপনি সেরে যায়, কাটাছেঁড়াগুলো জোড়া লেগে যায় সেলাই ছাড়াই! প্রকৃতির এই সব জটিল কর্মকাণ্ড কি আচমকা ঘটনাক্রমে হয়ে যাওয়া সম্ভব?’ উপরের প্রশ্নগুলো নিজেকেই নিজে করেছিলেন এক মিশরীয় লেখক। পেশায় তিনি ডাক্তার। তিনি তখন কেবল বুঝমান—শিল্পবিপ্লব আছড়ে পড়েছে পৃথিবীর আনাচেকানাচে। আধুনিকতার নানা সবকে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অবিশ্বাসী—নাস্তিক। মুসলিম দেশ, মুসলিমের ঘরে জন্ম—তবু ঈমান থেকে ছিলেন দূরে! এক দিন ভুল ভাঙে। ‘আঁধার পেরিয়ে আসা আলো’—সেই ভুলভাঙা জীবনের গল্প। কীভাবে, কেন, কোথায় ভুল হয়েছিল—কেন ভুল হয়—তা-ই লিখেছেন এই লেখক। কিন্তু এই ভুলময় পথ তো তার একার না। সে দিনও ছিল না, আজও নয়। বর্তমান সময়ে আধুনিকতা মানুষকে তার নিজ ভুবন থেকে, তার ফিতরত থেকে ছোবল মেরে নিয়ে যাচ্ছে আরও বহু দূরে! আগের চেয়ে সময় আরও অনেক বিপদসংকুল, অবস্থা অনেক বেশি ভয়াবহ! যে পথ ভুলে যায়, সে তো জানে না—পথটা ভুল। ‘আঁধার পেরিয়ে আসা আলো’—বইটি বিশেষ করে এই সময়ের তরুণ-তরুণীদের জন্য, যারা এখনও পথের নির্ণয় জানে না কিংবা যাদের বিবেচনা অত মজবুত হয়নি! তার জন্য তো অবশ্যই জরুরি, যে ফিতরতের পথ ভুলে হেঁটে চলে গেছে নাস্তিকতার নর্দমায়! বইটি অনুবাদ করেছেন আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। অনুবাদ তার এতই স্বাদু, মনে হয়, মূল লেখকের সাথে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লিখেছেন!
মুস্তাফা কামাল মাহমুদ হুসাইন (১৯২১-২০০৯) একজন মিসরিয় চিকিৎসক, দার্শনিক ও লেখক। পেশাগত জীবনের শুরুটা চিকিৎসক হিসেবে হলেও পরবর্তীতে তিনি লেখালেখি, সাংবাদিকতা, ভ্রমণ ইত্যাদী কাজে নিয়োজিত ছিলেন। বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ, নাটক, ছোটগল্প ও ভ্রমণকাহিনী মিলিয়ে তার বইয়ের সংখ্যা ৮৯ টি। মিসরীয় টিভিতে দীর্ঘ আঠাশ বছর আল ইলম ওয়াল ঈমান শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। ১৯৯৫ সালে মিসরের রাষ্ট্রিয় সম্মাননা পদক লাভ করেন। তাছাড়া একটি গ্রহাণু তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। মুস্তাফা মাহমুদ একটি মসজিদ, হাসপাতাল ও সেবামূলক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা।