রাত বাড়ার পর লোকজন ঘুমিয়ে পড়লে এক ফাঁকে চটের বস্তা দুটোকে নিয়ে পুকুর পাড়ে যায় রোজিনা । শীতের রাত কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, পুকুরের চারপাশে কলাগাছের সারি, একটা সারির ফাঁক দিয়ে চটের বস্তা দুটোকে পুকুরের কালো জলে ছুড়ে ফেলে। জোরে একটা শব্দ হয়, পানি চারদিকে ছড়িয়ে তরঙ্গের মতো সৃষ্টি হয়। রোজিনা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে, মনে হয় আজ স্বামীর সাথে সাথে তার সমস্ত পাপকেও যেন কবর দেয়া হলো। হাশরের ময়দানে তার কোনো দায় থাকবে না, সৃষ্টিকর্তা তাকে বলতে পারবে না তুই তোর স্বামীর ইজ্জত বাঁচাইতে পারলি না। লতিফ মিয়ার লোভের চোখ যেন রোজিনাকে গিলে খায়। কাদামাখা পায়ে রোজিনা পুকুরে নেমে পৌষের ঠাণ্ডা জলে ডুব দেয়, সারা শরীর কাঁপতে থাকে, পুকুর থেকে ঘরে আসার পথটুকু তার কাছে দীর্ঘ মনে হয় । ঘরে এসে কাপড় ছেড়ে রান্নাঘরে বসে হাড়িতে পড়ে থাকা ভাত খায় আর ভাবতে থাকে লতিফ মিয়া এমনভাবে কয়লা হইয়া পুইড়া মরলো, তার মরণটা যেন আজরাইলরেও হার মানাইলো, চটের বস্তার অস্ত্রগুলো সারাজীবনের জন্য তার সাথী হয়ে পুকুরের মিশমিশে কালো পানিতে হারায়া গেলো। যেমনভাবে লতিফ মিয়াও হারায়া গেলো। লতিফ মিয়া দুনিয়াতেই যেন বিচার পাইয়া গেলো । তার আর অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হবে না, পোড়া মরিচ ঠাণ্ডা ভাতে মেখে খেতে খেতে রোজিনা এইসব কথা ভাবতে থাকে। শীতের রাতে দলা পাকানো ভাত আর পোড়া মরিচ তার কাছে অমৃতের মতো লাগে ।
Novera Hossain- ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫, মাদারীপুর শহরে নানাবাড়িতে। শৈশব হতেই ঢাকায় বেড়ে ওঠা। তিনি লেখাপড়া করেছেন ধানমন্ডির কাকলি উচ্চ বিদ্যালয়, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে। লিটল ম্যাগাজিনে লেখা শুরু করেছেন ২০০০ সালের পর থেকে। বর্তমানে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন, দৈনিক পত্রিকা এবং গবেষণাধর্মী জার্নালে লেখেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : হারানো দোকান এল দরাদো ২০০৯ (জনান্তিক), একজন আঙুল শুধু হেঁটে বেড়ায় ২০১০ (সংবেদ), আর কারনেশন ফুটল থরে থরে ২০১৩ (শুদ্ধস্বর) এবং পিয়াস মজিদের সাথে যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন নির্বাচিত কবিতা : শামীম কবীর ২০১০ (অ্যাডর্ন)। এছাড়া ২০১১ সালে শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর গল্পগ্রন্থ পেন্ডুলাম ও শিশুর দোলনা। তিনি কিছুদিন নৃবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে গবেষণা কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন।