তন্ময় ও সুস্ময় নামের দুই জমজ ভাইয়ের কার্যকলাপ নিয়েই “আলোকিত মানুষ ” গল্পটি সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। এই দুভাই পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী কিন্তু তাদের শিক্ষক পড়ালেখার পাশাপাশি তাদেরকে সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেন। এক ঈদে তিনি তার শিক্ষার্থী দের প্রত্যেককে এমন এক একটা ভালো কাজ করতে বলেন, যে কাজের উজ্জ্বলতার রেশে তাদের চারপাশ আলোকিত হবে এবং তারা আলোকিত মানুষ হিসাবে পরিগণিত হবে। সেই স্যারের আদেশমতো তারা আলোকিত মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টা হিসাবে সমাজের অবহেলিত সমবয়সি রোজকার ময়লা নিতে আসা ছেলে রাজা আর টোকাই বাদশাকে ঈদের দিন তাদের বাসায় দাওয়াত দেয়। দুই ভাই তাদের প্রিয় লোভনীয় স্পেশাল খাবারের একটা মেন্যু তৈরি করে যেগুলো এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুগুলো কখনো টাটকা খায়নি। দোকানের শোকেসের কাচের বাইরে থেকে শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখেছে। এই দুই জমজ ভাই তাদেরকে সেই খাবার চেখে দেখাবার প্রয়াস নেয়। এই মেন্যু ও খাবার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ঘরে তৈরী করতে খুশিমনে এগিয়ে আসেন তাদের মা। সুস্ময় আগত সমবয়সি প্রত্যেক শিশুকে নতুন জামা, বই, খাতা, স্কুলব্যাগ আর তন্ময় তাদের অতি প্রয়োজনীয় জুতা ও স্যান্ডেল উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করে। তাদের এসব পরিকল্পনা শুনে ও দেখে তাদের প্রিয় দাদু নাতিদের কাছে এই শুভকাজে নিজে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ চান। তিনি রাজার মাকে তন্ময় ও সুস্ময়ের মায়ের সেলাই শেখার স্কুলে কাজ শেখানোর সুযোগ দেওয়র প্রস্তাব রাখেন। তিনি মনে করেন, রাজার মা ভালোভাবে কাজ শেখার পরে তাকে নতুন সেলাই মেশিন কিনে দিলে সে স্বনির্ভরতার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। আর তরকারির ফেরিওয়ালা বাদশার বাবাকে তরকারির ফেরি করার সুবিধার্থে ভ্যানগাড়ি কিনে দিতে চান। এতে কষ্ট করে তাকে ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে না। তন্ময় ও সুস্ময়ের পরিবারের মতো বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবার যদি এগিয়ে আসে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সুবিধাবঞ্চিতদের মুখে হাসি ফুটবে। পরিশেষে লেখিকার এই গল্পে বর্ণিত মানুষ গড়ার কারিগর সেই শিক্ষাককে স্যেলুট যিনি তার শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোকিত মানুষ হবার অনুপ্রেরণা বেশ সফলভাবে জাগিয়ে তুলেছেন এবং সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে সফল হয়েছেন। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। সেই শিশুদেরকে আলোকিত মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন পরিবারের পাশাপাশি তাদের শিক্ষকরা। এই গল্পে সেটাই লেখিকা অত্যন্ত সুন্দর ও প্রাঞ্জলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
প্রিন্সিপাল ডায়টেশিয়ান, এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা ভামান্না চৌধুরী, বাবা গোলাম মওলা চৌধুরী ও মা আশরাফা খানম চৌধুরীর তিন সালে। সন্তান তিনি। ঢাকা মতিঝিল আইডিয়াল হাই স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি আর বাবার সুবাদে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকার আজিমপুরে অনা গার্হস্থ্য অর্থনীতি মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে মাস্টার্সে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমপিএইচ এবং প্রোজেক্ট হোপ যুক্তরাষ্ট্র সেন্টার (কলকাতা) থেকে ডায়াবেটিক এডুকেশনে পিজিডিএম ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি ভারতের অ্যাপোলো গ্লিনাগেলস হসপিটালস কলকাতায় ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেন। তিনি ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে স্পেশাল ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন ও পেডিয়াট্রিক ডায়াবেটিসে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তামান্না চৌধুরী ২০০৫ সাল থেকে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকাতে ডায়টেটিকস বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সুদীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি ক্রিটিক্যাল কেয়ার নিউট্রিশন, ডায়াবেটিস, অনকোলজি, রেনাল পুষ্টি, শিশু ও অটিজম পুষ্টি এবং ওজন ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ওপর বেশি মনোনিবেশ করেন। তিনি ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন সম্মেলন/সেমিনার/কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং সাতবার আন্তর্জাতিক কেস প্রেজেন্টেশনে অংশগ্রহণ করেছেন। অতিথি বক্তা হিসেবে তিনি শতাধিক স্থানীয় ও বহুজাতিক করপোরেট হাউসে স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। টিম লিডার হিসেবে ইএসপিএন অস্ট্রেলিয়া থেকে তিনি চারবারেরও বেশি ওয়ার্ল্ড নিউট্রিশন সার্ভে সার্টিফিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক নিউজ পোর্টাল ও জাতীয় দৈনিকে তার প্রকাশিত নিবন্ধের সংখ্যা ৬০০+। তামান্না চৌধুরী ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর প্যারেন্টেলার অ্যান্ড এন্টেরাল নিউট্রিশন (আইএপিইএন)-এর আঞ্চলিক সম্পাদক (বাংলাদেশ) এবং বাংলাদেশ পুষ্টি ও ডায়টেটিকস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক। প্রফেশনাল ও পারিবারিক কারনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি ২০১৪-তে বাংলাদেশ নাট্যসভা হতে পুষ্টি বিষয়ে অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার পান। সি এম ও বাংলাদেশ ওমেন লিডারস অ্যাওয়ার্ড পান ২০১৮ সালে। প্রতিশ্রুতিশীল এই পুষ্টিবিদ মানব স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন