“মসনবী শরীফ (৫ খণ্ড একত্রে)" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ জ্ঞান অসীম আর মানবাত্মা অসীম। এই অসীম জ্ঞানের প্রান্ত সীমায় উপনীত হবার জন্য মানবাত্মার মাঝে রয়েছে এক অতৃপ্ত পিপাসা, অনুপম আকাঙ্খ। যা মানুষকে সদা ব্যতিব্যস্ত করে রাখে। মানব মনের এই পিপাসা নিবারণে মানুষ কখনাে বাস্তবতার মানদন্ডে তার চিন্তাকে বিস্তার করে, আবার কখনাে অন্তরের গভীর অনুভূতিতে ডুব দিয়ে জ্ঞান সাগরের মনিমুক্তা অন্বেষণ করে। জ্ঞান অন্বেষণের এই দু’রাস্তার নামই হলাে শরীয়ত ও মারফত। এই কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, জ্ঞানের প্রান্তসীমা হলাে আল্লাহ, আল্লাহতে পৌছতে পারাই পূর্ণতা। তবে এই পৌছার পন্থা দুটি, একটি হলাে বাস্তব বিচার বিশ্লেষণে পৌছা, যার নাম হলাে শরীয়ত, অপরটি হলাে আত্ম অনুভূতির মাধ্যমে পৌছা, যার নাম হলাে মারেফত। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মারেফতের রাস্তা কম হলেও শরীয়তকে বাদ দিয়ে মারেফতের প্রান্তসীমায় উন্নীত হওয়া কখনােই সম্ভব নয়, বরং এটা জঘন্য গােমরাহী। এ কারণেই জ্ঞান তাপস আধ্যাত্ম সম্রাট মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ) তার বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ মসনবী শরীফে শরীয়ত ও মারেফতের গুরুত্ব ও গুপ্ত রহস্যের বিস্তারিত বিবরণই তুলে ধরেছেন। তিনি এই মহাগ্রন্থে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের অভ্যন্তরীণ দিকের বিশদ ব্যাখ্যা, শরীয়ত মারেফত ও হাকীকতের নিগূঢ় সম্পর্ক দৃঢ় করার পন্থা, আত্মার পরিশুদ্ধি ও পবিত্রতার সাথে নফসকে দমন ও করায়ত্ব করে কুমন্ত্রণা সৃষ্টিকারী শয়তানের কবল থেকে রক্ষার উপায় বর্ণনা করেছেন। এলক্ষ্যে যথাযথ পথ প্রদর্শক ‘হাদী’ গ্রহণের আবশ্যকতা এবং গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা ইত্যাদিকে অতি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন। সর্বোপরি আত্ম সংশােধন, চরিত্র গঠন ও আল্লাহতে আত্মনিয়ােগের সহজ সরল পথের দিক নির্দেশনা দানেই এই গ্রন্থের লক্ষ্যবস্তু হয়ে রয়েছে। | এই লক্ষ্যকে সুষম ও মানব মনের উপযােগী করণার্থে মাওলানা রুমী তার মসনবীর পূরাে অবয়বে ছড়িয়ে রেখেছেন অনেক কিংবদন্তী কাহিনী। আর এই কাহিনীর ডালে ডালে শাখে শাখে জড়িয়ে রয়েছে ফলরূপী মুক্তো সাদৃশ্য উপদেশমালা, যাতে মুক্তোকামীকে মুক্তো অন্বেষণের মােহে বারংবার তাড়িত করে। গল্পের আবরণে শিক্ষা ও উপদেশের ঝুলি ঝুলিয়ে মানব মনকে প্রকৃত জ্ঞান তথা আল্লাহর পানে আহ্বান করেছেন, যাতে মানুষ অন্ধকার ও অজ্ঞতার আস্তাকুড় থেকে। নিজেকে উদ্ধার করে উন্নত চরিত্র ও পুত পবিত্র জীবন যাপনের মাধ্যমে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির মধ্য দিয়ে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে সক্ষম হয়।
জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (ফার্সি: جلالالدین محمد رومی; ৩০ সেপ্টেম্বর ১২০৭ – ১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩), যিনি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে তবে শুধু মাত্র রুমি নামেও পরিচিত, ১৩শ শতাব্দীর একজন ফার্সি[৭][৮] সুন্নি[৯] মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং সুফী ছিলেন।[১০] রুমির প্রভাব দেশের সীমানা এবং জাতিগত পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়েছে; ফার্সি, তাজাকিস্তানি, তুর্কি, গ্রিক, পশতুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানরা বিগত সাত শতক ধরে বেশ ভালভাবেই তার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে যথাযথভাবে সমাদৃত করে আসছে।[১১] তার কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ধারায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” [১২] এবং “সর্বাধিক বিক্রীত কবি” হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[১৩][১৪] রুমির সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রিক ভাষায়ও[১৫][১৬][১৭] রচনা করেছেন। [১৮][১৯] তার লেখা মসনবী-কে ফার্সি ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়।[২০][২১] বৃহত্তর ইরান এবং বিশ্বের ফার্সি ভাষী জনগোষ্ঠী এখনও তার লেখাগুলো মূল ভাষায় ব্যাপকভাবে পড়ে থাকে।[২২][২৩] অনুবাদসমূহও খুব জনপ্রিয়, বিশেষ করে তুরস্ক, আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায়।[২৪] তার কবিতা ফার্সি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে, শুধু তাই নয় তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজানি সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দী সাহিত্য, উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যেমন তুর্কীয়, ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, চাগাতাই, পশতু এবং বাংলা সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে। তার জীবনদর্শনের উপর শিবলী নোমানীর রচিত সাওয়ানেহে মাওলানা রূম অন্যতম। নাম