ভূমিকা আমাদের এই মহান দেশ ভারতবর্ষ প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত দেশের প্রতিটি মাঠঘাট, ঝোপজঙ্গলে এবং বাগানে ছড়িয়ে রয়েছে নানা ভেষজগুণে ভরা উদ্ভিদ। বহু প্রাচীনকাল থেকেই ঐ সমস্ত ভেষজ উদ্ভিদ মানুষের বিভিন্ন রোগে আরোগ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেবল ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের এই অমূল্য সম্পদ যাচ্ছে সেখানকার মানুষের রোগমুক্তি ঘটাতে।
এক ফোঁটা অমৃত যেমন মানুষকে চির-অমরত্মত্বদান করে, তেমনি ভারতীয় বনৌষধি তার নির্দিষ্ট পরমায়ু পর্যন্ত সুস্থ এবং নীরোগ হয়ে বেঁচে থাকতে উপকারী বন্ধুর মতো সাহায্য করে।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বহু রোগের অনেক দামী ওষুধ আবিষ্কার করেছে। সেই সব ওষুধে আমরা নিশ্চয় রোগের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছি। কিন্তু সবাই সাময়িক ব্যাপার। এরপর আরও একটি বিষয় থাকে যা আমরা কেউই ভাবনা-চিন্তা করে দেখি না। অ্যালোপ্যাথিক ওষুধে রোগ সারলেও পরবর্তীকালে তার যে প্রতিক্রিয়া হয় সেটা মূল রোগের থেকেও আরও ভয়াবহ। আবার তার জন্য শরীরে ওষুধ প্রয়োগ করে নতুনভাবে অপর একটি রোগে আমরা আক্রান্ত হয়ে পড়ি। এইভাবে চক্রাকারে একটি ওষুধের পর আরও একটি ওষুধ খেয়ে শেষপর্যন্ত আমরা মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত ওষুধের দাস হয়ে বেঁচে থাকি।
যে-কোন রোগে বনৌষধি প্রয়োগে রোগীর চক্রাকারে ওষুধ খাবার কোন প্রয়োজন হয় না। এমনকি পরবর্তীকালে শরীরে কোনরকম প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয় না। আর বনৌষধি রোগ নিরাময় করে সম্পূর্ণভাবে। সব থেকে বড় কথা হলো, গাছপালা শহর এলাকা ছাড়া বাকি সর্বত্র পাওয়া যায়। আর যদিও বা কিনতে হয় তার দামও গরীব মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে।
বাজারে গাছপালার গুণাগুণ সম্পর্কে বেশ কিছু দামী বাই ছাপা হলেও এই বই ছাপার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ সচরাচর যে সব গাছপালার সাথে পরিচিত এবং বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় গাছের পাতা,ছাল, ফুল, ফল, শিকড়, রস প্রভৃতি ব্যবহার করে উপকার পায়- সেই সব গাছপালার গুণাগুণ সম্পর্কে বিশেষ করে জানিয়ে দেয়া বিশেষত বাজারের ঐ উচ্চমূল্যের বইগুলো কেনা গরীর মানুষ তো দূরের কথা, উচ্চ-মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষেও অসুবিধা হয়।
দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা বুঝে আমরা ‘রোগ-আরোগ্যে উপেক্ষিত গাছপালা’ বইটি এমনভাবে লিখেছি, যাতে রয়েছে গাছের বর্ণনা এবং ছবি। সুতরাং চিনতে খুব একটা অসুবিধা হবে না। এর সঙ্গে আছে কি ধরনের রোগে কোন গাছ এবং তার পাতা, শেকড়, গাছের ছাল, আঠা, ফল, ফুল, ইত্যাদি কিভাবে ও কতটা পরিমাণে খেতে হবে তারও সহজ ভাসায় বর্ণনা। সেই সঙ্গে পুস্তকের মূল্য যথেষ্ট কম রাখ হয়েছে।
আমার বিশ্বাস, বইটি পাঠ করে দেশের মানুষ উপকৃত হবেন।