জীবনানন্দ দাশও ডায়েরি লিখেছেন। আত্মজীবনী লিখবেন বলে চিঠিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কোনওদিনই আত্মজীবনী লিখে উঠতে পারেন নি। আমার মনে হয় জীবনানন্দের ধাতে আত্মজীবনী লেখা ছিল না। যেমন রোদেল্যের কাফফা ও কামুর মানসিক গড়নে আত্মজীবনী লেখা ছিল না। বোদেল্যের জার্নাল লিখেছেন, কাফফা ডায়েরি লিখেছেন আর কামু লিখেছেন নোটবুক। জীবনান্দ লিখেছেন ‘লিটারারি নোটস্’। নক্ষত্রের দোষে, সৃষ্টির শিকারে, স্নায়ুর আঁধারের টানে একেকজন লেখক একেকরকম হয়ে যান। জীবনানন্দ দাশের প্রথম মুদ্রিত রচনা একটি কবিতা। ‘বর্ষর্—আবাহন’। ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকায় ১৯১৯ (বৈশাখ ১৩২৬ বঙ্গাব্দ)—এ প্রকাশিত। আর পাণ্ডুলিপির জীবনানন্দর প্রথম নিদর্শন ২৭ মে ১৯১১। ‘নদী’ নামে একটি কবিতা। ‘সমুদ্রের পানে সদা ছুটিতেছে নদী। কুলকুল রব করি বহে নিরবধি।/ কখন বা বড় হয় কখন বা ছোট।/ তরণী পোতাদি কত বহিতেছে মোট।’ অর্থাৎ জীবনানন্দ দাশের ৫৫ বছরের জীবনে পাণ্ডুলিপির বয়স ৪৩ এবং মুদ্রিত অক্ষরের বয়স ৩৫। জীবনানন্দ দাম ডায়েরিতে তাঁর জীবনকে বিভিন্ন পর্বে ভাগ করেছেন। যদিও ব্যক্তিগত ভাবে আমি জীবনের এই বিভাজন যুক্তিসংগত বলে মনে করি না, তবু আলোচনার সুবিধের জন্য তাই করতে হচ্ছে। তবে এখানে প্রধানত সৃষ্টিকর্মের নিরিখে বিভাজনটি করা হয়েছে। প্রথম পর্ব ১৯১১ থেকে ১৯২৮ এই ১৮ বছর, দ্বিতীয় পর্ব ১৯২৯ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত ২০ বছর এবং ১৯৪৯ থেকে ১৯৪৫ অবধি শেষ ৬ বছর।