কেন্দ্র থেকে গড়িয়ে আসা সংকটে প্রান্তীয় জনপদের হৃৎস্পন্দনের অবিচ্ছেদ্য ওঠানামাই এ গ্রন্থের গল্পগুলাের প্রধান বিষয় । নব্বইয়ের ছােটগল্পের সংকলনের পর রবিউল করিম ইতিমধ্যেই সমীর রায় চৌধুরী ও মুর্শিদ এ এম-এর সাথে দুইবঙ্গের উত্তরাধুনিক ছােটগল্প সংকলন সম্পাদনা করেছেন। এবং অনেক বছর ধরে সম্পাদনা করছেন কথাসাহিত্যের কাগজ 'ব্যাস’। জনপ্রিয় বাণিজ্যিক পত্রপত্রিকায় সক্রিয় তার সমসাময়িক লেখক বন্ধুদের সৃজনশীল, মননশীল লেখার জন্য নিজের কাগজকে উন্মুক্ত রাখলেও নিজে তিনি দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন জনপ্রিয় এই ধারাটি থেকে। তার গল্পগুলােও এই দুরত্রে নেপথ্য কারণ সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়। গ্রাম থেকে শহর অবধি বিস্তত তার গল্পজগৎ, কিন্তু গল্পের চরিত্ররা প্রায় সবখানেই প্রান্তীয়জনের প্রতিনিধিত্ব করে। অধিকাংশ গল্পে তারা ব্যক্তিগত অসহায়তা থেকে শুরু করে শেষাবধি সামষ্টিক প্রতিরােধের লড়াইয়ে এসে এক কাতারে দাড়ায়। অবদমন-কেন্দ্রিক সভ্যতার বিপরীতে জীবনের এই ঈপ্সিত গুণকে তিনি বরাবরই গল্পে ফুটিয়ে তােলেন । সস্তা জনপ্রিয়তার মােহে গল্প ফাদা আর জনপ্রিয় কাগজে হাজিরা দেওয়ার বাজারি প্রবণতা এড়িয়ে তার যাত্রা আজও অব্যাহত। ফলে তার হাতে কৃষ্টালবলপ্রতিম এসব গল্পের জন্য সম্ভব হয়ে ওঠে, যেগুলাের ভিতর দিয়ে নদীস্নেহে লালিত এই ব-দ্বীপের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বাৰ্ত রূপটি মূর্ত হবার অবকাশ পায়, রাষ্ট্রীয় বাস্তবতায় চলমান বিকট সংকটগুলাে কীভাবে এ জনপদকে বিধ্বস্ত করে এবং কীভাবেই বা এর অধিবাসীরা তা রুখে দাড়ায় তার রূপরেখাটিও যথাযথভাবে ফুটে উঠতে পারে । আর রয়েছে অনাহত ভাষাস্রোত ; উল্লেখ না করলেই নয়, যা পুরাে গ্রন্থটিতেই এক ঐন্দ্রজালিক আবহ এনে দিয়েছে।