মানব প্রগতির সমগ্র অস্তিত্বপ্রবাহ মানুষের হাত ছুঁয়ে ধাবিত। হাজার বছরে আমাদের মনোজগতে গড়ে ওঠা স্থবির ভাব-ভাবনার কারণে ইহজাগতিক চর্চা প্রায় নেই বললেই চলে। স্থবির জনগোষ্ঠীর চেতনায় ভাগ্যচক্রে নতুন ধ্যান-ধারণার সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক স্ফুরণ ঘটেছিল গত শতাব্দীতে। সেখানে মার্কসবাদী মননচর্চার বিশাল প্লাবন অস্বীকার করার উপায় নেই। বহুধাবিভক্ত ও শ্রেণীবৈষম্য-পীড়িত সমাজের তলানিতে থাকা নিম্নবর্গীয়দের ভিত্তিমূলে সেই আওয়াজ পৌঁছানোর কাজে সূর্যমণি দেব (১৯১০-১৯৯৯) ছিলেন একজন অগ্রণী সৈনিক। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ঝুঁকির চেয়ে সেই যাত্রাপথ ছিল আরো কণ্টকিত। উচ্চবর্গের ইতিহাসচর্চার ফলে মফস্বলের প্রান্তে ঘাম ঝরানো বা জীবনত্যাগী কর্মীদের বিয়োগান্ত পরিণতির মূল্যায়ন সাধারণত হয় না। আবার আধুনিক প্রণালিবদ্ধ তাত্ত্বিক কাঠামোর মধ্যে বিষয় প্রকরণ বিনির্মাণ ও বিশ্লেষণের ফাঁকে মূল সংগ্রামীদের নাম আরো তলিয়ে যায়। আঞ্চলিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে অতি মানবীয় রূপ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতা সাম্প্রতিককালে লক্ষণীয়। কিন্তু যাঁরা প্রকৃত সমাজকর্মের কারণে সাধারণ লোকের হৃদয়ে ঠাঁই নিয়েছেন, তাঁদের বর্তমান স্বার্থের চোরাবালিতে ডুবে থাকা সমাজ ও বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করা কঠিন। সূর্যমণি দেবের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।