তাতার ও মোঙ্গল, মামলুক, আইন জালুত, শাজারাতুদ দুর, সাইফুদ্দিন কুতুজ, রুকনুদ্দিন বাইবার্স এগুলো এখন বাংলাভাষী মানুষের কাছে পরিচিত নাম। এসব নিয়েই রচিত গ্রন্থটি। গ্রন্থটিতে মোঙ্গলদের মোকাবিলায় মামলুকদের সার্বিক তৎপরতা তুলে ধরা হয়েছে, তাঁদের সংগ্রামের কথা সুচারুরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে। তেমনিভাবে সাইফুদ্দিন কুতুজের জীবনীও বর্ণিত হয়েছে। যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার কথা তুলে ধরা হয়েছে; সঙ্গে বিশ্লেষণসহ আইন জালুতে মুসলিমদের বিজয়ের কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। শাসনক্ষমতা লাভের নীতিমালা এবং ইতিহাসের শিক্ষাও উদ্্ঘাটন করা হয়েছে। আইন জালুতে বিজয়ের গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো ছিল—বিচক্ষণ নেতৃত্ব, স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি, সুস্পষ্ট লক্ষ্য, বিশুদ্ধ চিন্তাচেতনা, শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা, উম্মাহর শত্রুদের সঙ্গে বন্ধুত্বহীনতা, যোগ্য লোকের কাছে দায়িত্ব অর্পণ, শক্তিশালী বাহিনী, জিহাদের পুনর্জাগরণ ও উপায়-উপকরণ গ্রহণ; তেমনিভাবে সামরিক প্রশিক্ষণের সঙ্গে আদর্শিক দীক্ষা, ক্রমাগত প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিভা, সাইফুদ্দিন কুতুজের দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণ রাজনীতি, মামলুকবাহিনীতে বিজয়ী দলের গুণাবলি পাওয়া যাওয়া, পর্যায়ক্রমিক আদর্শ ও প্রতিরোধ-পরিকল্পনার উত্তরাধিকার, আলিমদের সাহায্য ও পরামর্শ চাওয়া, দুনিয়াবিমুখতা, মোঙ্গল রাজপরিবারে ভেতরগত দ্বন্দ্ব এবং জালিম ও অবাধ্যদের পাকড়াও করার ব্যাপারে আল্লাহর রীতি ইত্যাদি ছিল আইন জালুতে বিজয়ের অন্যতম কারণ।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০