তেরোশো পঞ্চাশ বঙ্গাব্দ বাঙালি নামক জাতির আত্মকথারই একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়। দুঃখের, অপমানের, লজ্জার। সেই বিষাদসিন্ধুর কথা ভুলে গেলে ক্ষুধা এবং মহামারিতে মৃত ত্রিশ লক্ষ নারী পুরুষ শিশুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়। অপমান করা হয় সেদিনের বাঙালি কবি লেখক শিল্পীদের স্মৃতিকেও। আমরা তাঁদের হৃদয়ের ক্ষত চিরকাল বহন করে চলব বলেই না সেদিন এমন করে কলমে, তুলিতে নিজেদের মানবতাবোধকে উজাড় করে দিয়েছিলেন ওঁরা। এই উত্তরাধিকার কি আমরা বিস্মৃত হব? তেরোশো’ পঞ্চাশের মন্বন্তর নিয়ে গবেষকেরা অনেক আলোচনা গবেষণা করেছেন। অনেকেই চেষ্টা করেছেন মন্বন্তরের পটভ‚মি ব্যাখ্যার। কেউ কেউ তার কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের। একালেও অনেকে আলোচনা, গবেষণা করছেন। অমর্ত্য সেন থেকে মার্কিন গবেষক পল গ্রিনো, তেরোশো পঞ্চাশের রহস্যভেদের চেষ্টা করেছেন অনেকেই। আশ্চর্য এই, অনেকেই তেরোশো পঞ্চাশ উপলক্ষ্যে রচিত বাংলা সাহিত্য শিল্পের প্রতি তাকানো জরুরি মনে করেননি। অথচ চল্লিশের দশকের শিল্প-সাহিত্য, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, সংগীতসবই কিন্তু ওই কঙ্কাল স্ত‚পের মতো, বলতে গেলে মন্বন্তরেরই ফসল। লঙ্গরখানা সংকলনগ্রন্থের আঠারোটি গল্প শুধু তেরোশো পঞ্চাশের মন্বন্তরের করুণ স্মারকই শুধু নয় বরং দেশে দেশে, কালে কালে ‘দুর্ভিক্ষ’ নামের মানব-বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদনামা।
বলা হয়-বাল্যকাল মানে সকাল বেলাই একজন মানুষের জীবনের পথপ্রদর্শক। বাউন্ডুলেপনার শুরু স্কুলে থাকতেই ‘ভােজনং যত্রতত্র, শয়নং হট্টমন্দিরে’- এই ছিল মন্ত্র । তারপর সাংবাদিকতা, জেলখাটা, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কাজকত কী! অবশেষে একদিন কলকাতায় নােঙর ফেলা ১৯৬৩এর দিকে। বন্ধু-বান্ধব জুটল অনেক। তার মধ্যে উঠতি কবি-লিখিয়েরাই সংখ্যাধিক্য। এদের মধ্যে ছিলেন শক্তি, সুনীল, শীর্ষেন্দু, উৎপল, সন্দীপন প্রমুখ আজকের নক্ষত্ররা সান্নিধ্য ও সস্নেহ প্রশ্রয় পেয়েছেন কমল কুমার মজুমদার, গৌর কিশাের ঘােষ, নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, সন্তোষ কুমার। ঘােষের মতাে সহৃদয় মানুষদের। নিজের অস্তিত্বকে জানান। দেওয়ার জন্যে লেখালেখির শুরু ১৯৬৫ সালে। মূলত গদ্যের লেখক হলেও পর্বতপ্রমাণ আলসেমির জন্যে কুঁড়ের বাদশা বলে পদ্যকেই বেছে নিলেন বাঙালি ঐতিহ্যের ধারায় । এই ছন্নছাড়া সময়ের ভেতরই কিছুদিন সম্পাদনা করেছেন কৃত্তিবাস'-এর মতাে পত্রিকা। ১৯৭৪ সালে দেশে ফেরা। আর দশজন কুলাঙ্গার ছেলের মতােই মায়ের আদেশ শিরােধার্য করে বিয়ে বা গার্হস্থ্য আশ্রমে প্রবেশ । সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানীর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে যাবতীয় খ্যাতি বা অখ্যাতি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আট-এর মতাে। পুরস্কারের মধ্যে মাটি খুঁড়ে পাওয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১৯৮৪-তে। অনেক বিষয়ের মধ্যে সায়েন্স ফিকশন তার বিশেষ প্রিয় একটি । জন্ম: ১৯৩৮-এ শরিশাদিতে । লেখকের অন্যান্য কটি বই-কবিতা: যাবজ্জীবন পরম উল্লাসে, কবিতার কমলবনে, স্বপ্নবন্দী, অনূদিত উপন্যাস: মৃত্যুর কড়ানাড়া; কিশাের উপন্যাস: ফাতনা; কিশাের গল্প সংকলন: বত্রিশ দাত।