রাত ১০.৪৬। লুভর মিউজিয়াম, প্যারিস। লোহার বিশাল দরজা পড়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে মিউজিয়ামে ঢোকার পথ। মেঝেতে একটা ছবির ক্যানভাসের নিচে পড়ে আছেন বৃদ্ধ কিউরেটর জ্যাক সনিয়ে। কথা বলে উঠল কেউ, ‘নড়বেন না,’ আগন্তুক পিস্তল ধরল কিউরেটরের দিকে। ‘ওটা কোথায়? কী এমন গোপন জিনিস ওটা, যার জন্যে আপনি মরতেও দ্বিধা করবেন না?’ আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে হাত তুললেন সনিয়ে। ‘দাঁড়ান, তথ্যটা আপনাকে বলব আমি।’ বলার পর বিচ্ছিরি শব্দে হেসে উঠল আগন্তুক। ‘বাকি তিনজনও একই কথা বলেছেন আমাকে।’ বৃদ্ধ বুঝলেন তার তিন ভাইও মৃত্যুর আগে পরিকল্পিত মিথ্যে কথাটা জানিয়ে গেছে আগন্তুককে। বৃদ্ধের পেটে গুলি করল আগন্তুক। ‘যন্ত্রণা ভালো, মসিয়েঁ,’ বলে চলে গেল। কিউরেটর কাঁপছেন, একটা ভয় গ্রাস করে ফেলছে তাঁকে। পৃথিবীর সর্বকালের সবচেয়ে গোপন তথ্যের একমাত্র মালিক এখন জ্যাক সনিয়ে। তিনি মারা গেলে কেউ আর সেই অবিশ্বাস্য সত্যটা জানতে পারবে না। পৃথিবীতে আর মাত্র একজনই আছে, যার কাছে গোপন তথ্যের এই মশালটা দিয়ে যেতে পারেন তিনি। গ্যালারির ওপরের দেয়ালে বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্মগুলো টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। ছবিগুলো তাঁর দিকে তাকিয়ে পুরোনো বন্ধুর মতো হাসছে। শরীরের সব শক্তি এক করলেন বৃদ্ধ। অবশ্য পালনীয় কাজটা সম্পূর্ণ করার জন্য এখন প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগাতে হবে তাঁকে। ‘গোপন তথ্যটা কাউকে বলে যেতে হবে, যেভাবেই হোক।’
মার্কিন থ্রিলার লেখক ড্যানিয়েল গেরহার্ড ব্রাউনের জন্ম ১৯৬৪ সালের ২২ জুন। ড্যান ব্রাউন নামেই বিখ্যাত এই লেখকের জন্মস্থান যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের এক্সিটারে। তাঁর বাবা বিখ্যাত গণিত শিক্ষক রিচার্ড জি. ব্রাউন ফিলিপস এক্সিটার একাডেমিতে পড়াতেন। এই সূত্রে ড্যান এই একাডেমি থেকেই গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর আমহার্স্ট কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন তিনি। ছোটবেলায় সংগীতের প্রতি ঝোঁক থাকায় ১৯৮৬ সালে পেশাদার সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হন। ১৯৯৪ সালে সিডনি শেলডন এর লেখনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ড্যান লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। উপন্যাস হিসেবে ড্যান ব্রাউন এর বই 'ডিজিটাল ফোরট্রেস' প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে, সেটাই ছিল তাঁর প্রথম লেখা। পাঠক বইটি সাদরে গ্রহণ করায় আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২০০৩ সালে প্রকাশিত 'দ্য ভিঞ্চি কোড' বিশ্বজুড়ে তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়। ক্রিপ্টোগ্রাফি বা সাংকেতিক চিহ্নের রহস্যময়তা, কী, কোড এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর সন্নিবেশ তাঁর রচনাগুলোকে করেছে আরো আকর্ষণীয়। রবার্ট ল্যাংডনের চরিত্রটিকে কেন্দ্রে রেখে তিনি দুঃসাহসিক সব অভিযানের রূপায়ণ করেছেন তাঁর লেখায়। ড্যান ব্রাউন এর বই সমূহ বিশ্বজোড়া থ্রিলার পাঠকদের জন্য যেন সোনার খনি। তাঁর রচনায় বুঁদ হয়ে থাকা পাঠকেরা সাংকেতিক রহস্যময়তার জন্য ড্যান এর রচনার সমাদর করেন। পাঠকনন্দিত ড্যান ব্রাউন এর বই সমগ্র হলো 'ডিসেপশন পয়েন্ট', 'এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস', 'দ্য লস্ট সিম্বল', ' ইনফার্নো' ও 'অরিজিন'। তাঁর লেখা বই বিশ্বের ৫২টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিক্রি হয়েছে ২০০ মিলিয়নেরও বেশি কপি। এছাড়াও 'এঞ্জেলস এন্ড ডেমন্স', 'দ্য ভিঞ্চি কোড', এবং 'ইনফার্নো' পেয়েছে চলচ্চিত্র রূপ। যদিও তাঁর রচনা নিয়ে ধর্মতত্ত্ববিদেরা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, তবে ড্যান তাঁর রচনাকে ধর্মের রহস্যময়তার নতুন এক দিক হিসেবেই বর্ণনা করেছেন।