"ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান" বইয়ের পিছনের ফ্ল্যাপের লেখা: উপন্যাসে যে ব্যাপ্তি সচরাচর প্রত্যাশা করা হয় তা পূরণের প্রয়াস সেই তুলনায় বিশেষ লক্ষ্যযােগ্য হয় না। আমাদের অগ্রজ লেখকেরা সেদিক দিয়ে ছিলেন ব্যতিক্রমী। এমনি পৃথক ঘরানার লেখক আবু জাফর শামসুদ্দীন রচনা করেছিলেন। এপিকধর্মী উপন্যাস পদ্মা মেঘনা যমুনা এবং বিশালাকার আখ্যান ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধের পটভূমিকায় বাংলার এক বিশিষ্ট অঞ্চলের জীবনধারা তিনি সজীব করে তুলেছিলেন ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান গ্রন্থে ভারতে বৃটিশ শাসন যেসব পরিবর্তনময়তা বয়ে আনছিল তার মুখােমুখি হয়ে সমাজে সৃষ্ট আলােড়ন, প্রতিরােধ ও সংগ্রাম এখানে মূর্ত। হয়েছে কাহিনীর বিস্তার ধারাবাহিকতায় ঔপন্যাসিকের হাত ধরে পাঠক প্রবেশ করবেন ভাওয়াল গড়ের জীবনের গভীরে, অতীত জীবনযাত্রা জানবেন নিবিড়ভাবে এবং যুক্ত হবেন হাসি-কান্না, প্রেম-অপ্রেমের দোলাচালে মানবের চিরন্তন আকুতির সঙ্গে প্রাবন্ধিক, চিন্তক, কথাসাহিত্যিক আবু জাফর শামসুদ্দীনের। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত এই বিশেষ সংস্করণ নতুন করে পাঠকের পরিচিতি ঘটাবে শক্তিমান এক সাহিত্যব্রতীর সঙ্গে।
আবু জাফর শামসুদ্দীন বাংলা ১৩১৭ সালের ২৮ ফাল্গুন (মার্চ, ১৯১১) তৎকালীন ঢাকা জেলার কালীগঞ্জ থানার দক্ষিণবাগ গ্রামে এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালে তাঁর সাহিত্য জীবনের শুরু। তিনি অসংখ্য গল্প, বেশকিছুসংখ্যক উপন্যাস, নাটক, মননশীল প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী প্রভৃতি রচনা করেছেন। তাঁর রচিত এবং প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা তিরিশটির অধিক। তাঁর হাজার পৃষ্ঠার সুবৃহৎ উপন্যাস 'পদ্মা মেঘনা যমুনা' বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। উভয় বাংলায় এ-গ্রন্থ উচ্চ প্রশংসা অর্জন করে। আবু জাফর শামসুদ্দীনের গল্প ইংরেজি, জাপানি, হিন্দি, উর্দু, মারাঠি প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। উপমহাদেশের একজন প্রথম সারির সাংবাদিক এবং কলামিস্ট হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। ১৯৭৫ সাল থেকে দৈনিক 'সংবাদ'-এ 'অল্পদর্শী' এই ছদ্মনামে 'বৈহাসিকের পার্শ্বচিন্তা' শীর্ষক কলাম মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিয়মিত লিখে গেছেন। সাহিত্য এবং সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, বেগম জেবুন্নিসা-কাজী মাহবুবুল্লাহ স্বর্ণপদক, জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি স্বর্ণপদক, সমকাল সাহিত্য পুরস্কার, মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রভৃতি লাভ করেন। তিনি সৃজনশীল লেখার পাশাপাশি মানব মুক্তি ও বিশ্ব শান্তির আদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। বাংলা ১৩৯৫ সালের ৭ ভাদ্র (২৪ আগস্ট ১৯৮৮) তিনি পরলোক গমন করেন।