কলমের ভাষাকে কণ্ঠে যথাযথ উচ্চারণে, ছন্দ-তাল-লয়, মাত্রার প্রাসঙ্গিক প্রয়োগে এবং অনুভূতির পরিমিত নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে প্রকাশকেই আমরা আবৃত্তি বলতে পারি। যুগ পরিক্রমায় একটা বিতর্ক সুস্পষ্ট। আবৃত্তিচর্চা পুরোপুরি পারফর্মিং আর্ট না কি একটি যৌগিক শিল্পকলা? আমরা এ বিতর্কে না জড়াই। শুধু এটুকু জানি ছোটবেলায় মা-বাবা জোরে জোরে পড়তে বলতেন, মক্তবের হুজুর কোরআনের আয়াত সুমধুর উচ্চারণে শব্দ করে পাঠ করতে বলতেন। কেন? বিজ্ঞান কিন্তু আমাদের সেই সেকেলে বাবা-মা আর মাস্টারমশাইদের আদেশকেই সমর্থন করে। এই সমর্থনের দারুণ এক নামও তারা দিয়েছেন, ‘প্রোডাকশন ইফেক্ট’। তাহলে কী দাঁড়াল? একজন আবৃত্তিশিল্পী কবিতার নীরব শব্দগুলোকে এই ইফেক্টের মাধ্যমে শ্রোতার কাছে আরো শক্তিশালী করে তুলে ধরেন। আর কে না জানে আলোর চেয়ে শব্দের গতি বেশি। কাজেই কলমের আলো যখন শব্দে রূপ নেয় তার গতি তুঙ্গে থাকবে; এ তো সর্বজনস্বীকৃত। ‘মোরা আর জনমে হংসমিথুন ছিলাম/ ছিলাম নদীর চরে/ যুগলরূপে এসেছি গো আবার মাটির ঘরে।’ নজরুলের এই গানের বাণী হৃদয় তন্ত্রীতে যে ঝংকার তোলে তা সমঝদার মাত্রই বুঝবেন। যুগলপ্রেমের আকুলতা আর অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে গানের এমন বাণীর জন্য যেমন চাই যথোপযুক্ত সুর আর কণ্ঠ, তেমনি কবিতার রূপমাধুরী আর রহস্যকে ফুটিয়ে তুলতে চাই যথোপযুক্ত ছন্দ ও কণ্ঠ। কণ্ঠের কারুকাজেই কবিতা পৌঁছে যায় পাঠকের কর্ণকুহরে। কবিতা বরাবরই হৃদয়ঙ্গমের। সেই হৃদয়ে কবিতা যদি শ্রবণের সুখ নিয়ে পৌঁছায় তাতে কবিতার কল্লোল নাচে সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে এবং সেই কবিতা যদি হয় যুগল কণ্ঠে ধারণকৃত তাহলে তার আবেদন হয় আরো প্রাণময়ী। মূলত এমন ভাবনা থেকেই আমাদের এই প্রচেষ্টা-‘যুগল জোনাকি’।