“বাংলাদেশের আরেক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ সকল অর্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম। তিনিই বাংলাদেশ। তিনি দুর্ভাগা এই দেশে জন্মেছিলেন বলেই আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। যতই দুঃখ থাক, বঞ্চনা থাক তবুও আমরা মুক্তিযুদ্ধের ফসল একটি অনন্য স্বাধীন দেশের মাথা উঁচু করা নাগরিক। ফিলিস্তিনি দুঃখী মানুষগুলাের সঙ্গে তুলনা করলে বুঝতে পারি আমরা কতটা ভাগ্যবান। অনেকটা ভিয়েতনামবাসীদের। মতাে সৌভাগ্যবান আমরা। আর এই সৌভাগ্যের স্বর্ণদুয়ারের চাবিটি ছিল বঙ্গবন্ধুর হাতে। একদিনেই আসেনি ঐ চাবি তাঁর হাতে। শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠা এক দীর্ঘপথ। সেখান থেকে জাতির জনক হওয়ার পথের দূরত্বও কম নয়। এই সুদীর্ঘ পথ তিনি হেঁটেছেন দারুণ এক প্রত্যয় ও সাহস নিয়ে। নিজে যেমন সাহসী। ছিলেন, পুরাে জাতিকেও তিনি সাহসী করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। একজন বীরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলাে তাঁর সাহস। আর বাঙালির এই শ্রেষ্ঠ বীরের ছিল সীমাহীন সাহস। মৃত্যুর মুখােমুখি দাঁড়িয়েও তিনি তাঁর সর্বোচ্চ সাহস দেখিয়েছেন। তাঁর এই সাহসের ভিত্তি ছিল জনগণের জন্য অকৃত্রিম ভালােবাসা। আর তার জন্য জনগণের হৃদয় নিংড়ানাে ভালােবাসা। এই ভালােবাসার উৎস ছিল তাঁর নিরঙ্কুশ দেশপ্রেম। তার প্রতি জনগণের অগাধ বিশ্বাস। একটি জাতি গড়ে তােলার পেছনে এই বিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক সময়ের পূর্ব বাংলা, আজকের বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের দুঃখ মােচনের জন্যে তিনি কতােই না জেলজুলুম সহ্য করেছেন। নিজের সংসার, সন্তানদের কথা না ভেবে এ দেশের দুঃখী মানুষের কথা অন্তর দিয়ে। ভেবেছেন। পাকিস্তানের সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে যে অবিচার, অন্যায্যতা ও বৈষম্য বিরাজ করছিল তার অবসানের জন্য তিনি ছাত্রজীবন থেকেই সগ্রামে। অবতীর্ণ হন। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে তার বিশাল এক দেশপ্রেমিকের ভাবমর্তি। ক্ষুদিরাম, সুভাষ বসুর মতােই তাকেও জনগণ এক ত্যাগী বীর হিসেবে। শ্রদ্ধা করতেন এবং বিশ্বাস করতেন। আর সে কারণেই তিনি ষাটের দশকের উত্তাল এক সময়ে শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধুতে রূপান্তরিত হন। তাঁর ব্যক্তিত্বের এই রূপান্তরের গল্প আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এখনাে সেভাবে বলা হয়ে ওঠেনি। মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিপরীক্ষার শেষে এই বঙ্গবন্ধুই জাতির জনক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। স্বাধীন দেশের পরিচালনার ভার হাতে নিয়ে তিনি কী বিরাট প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন সে কথাও আমাদের আজকের তরুণ প্রজন্ম পুরােপুরি জানে না। রাতদিন পরিশ্রম করে স্বদেশের উন্নয়নের সংগ্রামে যখন তিনি সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে ঠিক তখনই স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরােধী শক্তি হঠাৎ করেই রাতের অন্ধকারে পেছন থেকে হামলা করে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তাঁকে তাঁর প্রিয় জনগণ থেকে। খুনি এই চক্র এক দল অসৎ রাজনীতিক ও ক্ষমতাশ্রয়ী অমানুষের প্রশ্রয়ে দীর্ঘ দিন তাঁকে সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি থেকে আড়াল করার দুঃসাহস দেখিয়েছিল। কিন্তু ধর্মের কল যে বাতাসে নড়ে। তাই দীর্ঘদিন পরে হলেও খুনিদের চূড়ান্ত বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। খুনিদের মদদ দানকারী অশুভ রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির পতন ঘটেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু তাই বলে প্রতিবন্ধক শক্তির • বিষদাঁত ভাঙা এখনাে সম্ভব হয়নি। অশুভ এই শক্তিকে পরাস্ত করার একটিই পথ-সুশাসন, সুষম উন্নয়ন, ন্যায্য শাসনব্যবস্থা এবং বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও অবদানকে স্বমহিমায় নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা। বঙ্গবন্ধুর গরিব-হিতৈষী স্বদেশি উন্নয়ন ভাবনাকে তাদের মনােজগতে পৌছে দেয়া। বঙ্গবন্ধুকে আমাদের সন্তানদের নিত্যসঙ্গী করে তােলা। এমন একটি লক্ষ্য নিয়েই আমি ‘শেখ মুজিব : বাংলাদেশের আরেক নাম বইটি (দীপ্তি প্রকাশনী) ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করেছিলাম। পাঠকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে বইটি তারা সাদরে গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি সংস্করণ নিঃশেষ হয়ে গেছে। বইটি আকারে বড় এবং প্রচুর সংযােজনী থাকায় তরুণ প্রজন্মের হাতে সুলভ মূল্যে তুলে দেয়া সম্ভব হয়নি। সে জন্য আরাে সহজ ও সংক্ষেপ করে বাংলাদেশের আরেক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ নামে বইটি নতুন করে উপস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এ কাজটি সম্ভব হয়েছে সম্পাদক অধ্যাপক হায়াৎ মামুদের সক্রিয় সহযােগিতার জন্য। তাঁর কাছে আমি খুবই কৃতজ্ঞ। মূল বইটির কারিগরি সম্পাদনাও তিনি করেছিলেন। যােগ্য হাতে পড়ায় অল্প পরিসরে সম্পাদিত এই বইটি তরুণ প্রজন্মের কাছে গ্রহণীয় হবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি। এই বই পড়ে তরুণ পাঠকদের মনে যদি বঙ্গবন্ধুর আজীবনের সংগ্রাম ও সদিচ্ছা বিষয়ে আরাে জানার আগ্রহ জন্মে তাহলেই আমি খুশি হবাে। তাঁকে জানা এবং তার স্বপ্নের আদলে বাংলাদেশকে গড়ে তােলার মহৎ সংগ্রামে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করার জন্যই আমাদের বঙ্গবন্ধুর জীবন ও অর্জন বিষয়ে আরাে বেশি করে লেখালেখি করা উচিত।
Atiur Rahman- রহমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। প্রচলিত ধারার বাইরের এক উন্নয়ন গবেষক। কর্মজীবীর। স্বাপ্নিক এই পরিশ্রমী লেখক যা বিশ্বাস করেন তাই অপকটে প্রকাশও করেন। সর্বক্ষণ সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখবার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে। প্রচলিত উন্নয়ন ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখে চলেছেন দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতিকে। বহুমাত্রিক বিষয় হিসেবে উন্নয়নকে বাংলা ভাষায় সহজ করে উপস্থাপনের কৃতিত্ব তাঁকে দিতেই হবে। গরিবের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্বের কথা সকলেরই জানা। সব লেখাতেই তিনি তা তুলে ধরেন তাঁর হৃদয় দিয়ে। ১৯৮৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি প্রাপ্ত ড. আতিউর রহমান স্বদেশেই রয়ে গেছেন। সর্বক্ষণ ব্যস্ত রয়েছেন ব্যতিক্রমী গবেষণায়, গণমাধ্যমে, জনবিতর্কে, সাধারণের ভাষায় লেখালেখিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি সিডিএফ-এর সভাপতি, মোনাজাতউদ্দীন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এবং বিশ্বসাহিত্য-কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি। জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিনি সাবেক চেয়ারম্যান। বিআইডিএস-এর একজন সাবেক উর্ধ্বতন গবেষক ড. রহমানের অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে দেশের ও বিদেশের নামকরা প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ভাষা আন্দোলন : আর্থ-সামাজিক পটভূমি’; মুক্তিযুদ্ধের তিনটি বই :‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের মানুষ’; ‘অসহযোগের দিনগুলি’,রবীন্দ্র-অমর্ত্য ভাবনা;’ ‘উন্নয়ন আলাপ;’ ‘জনগণের বাজেট;’ ‘আলো আঁধারের বাংলাদেশ;’ ‘সুশাসনের সন্ধানে;’ ‘ অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন;’ ‘উন্নয়ন কার জন্য;’ ‘অপউন্নয়ন;’ ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ খুঁজে ফেরা;’ `Peasants and classes;’ `Education for Development’ ইত্যাদি। দেশি ও বিদেশি প্রফেশনাল জার্নালে তাঁর বিপুল সংখ্যক গবেষণা-প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সব মিলে তিরিশটিরও বেশি বইয়ের লেখক ড. রহমান।