জাতীয়তাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নাগরিকগণ জাতীয় রাষ্ট্র গঠন করে। অতীতে প্রাচীন গ্রিসে যে রাষ্ট্রব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছিল তা ছিল নগররাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রগুলোর আর নগররাষ্ট্র নেই। বর্তমান রাষ্ট্র হলো জাতীয় রাষ্ট্র। জাতীয়তার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের নাগরিকগণ যখন একটি কল্যাণরাষ্ট্র গঠন করে তখন সেই রাষ্ট্রকে জাতীয় রাষ্ট্র বলা যায়। বর্তমানে অসংখ্য জনপদ, শহর-নগর এবং এক বা একাধিক জাতি নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয়। এসব রাষ্ট্রের আয়তন যেমন বিশাল তেমনি জনসংখ্যাও বিপুল। অনেক সময় এসব জাতীয় রাষ্ট্র বহু ধর্মের, বহু বর্ণের এবং বহু ভাষাভাষি মানুষ বসবাস করে। তবে তাদের জাতীয় পরিচয় থাকে একটি এবং একই জাতীয়তাবোধে তারা উদ্বুদ্ধ হয়। নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তা অপেক্ষা রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রিক জাতীয়তাই জাতীয় রাষ্ট্র প্রাধান্য পায়। বর্তমানে প্রায় সকল জাতীয় রাষ্ট্রেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিংবা প্রতিষ্ঠার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাশাপাশি এসব জাতীয় রাষ্ট্র জনকল্যাণকর কাজেও মনোনিবেশ করেছে। পনেরো ও ষোলো শতকে ধর্মীয় আধিপত্যবাদ ও মধ্যযুগীয় বিশ্বজনীনতাবাদের করালগ্রাস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ইউরোপীয় জনগণ যে আন্দোলন পরিচালনা করে, মূলত তা থেকেই জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। ইতালির রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ম্যাকিয়াভেলী তার দূরদৃষ্টি দ্বারা অনুভব করেন যে, আগামীতে যে রাষ্ট্রব্যবস্থার উদ্ভব হবে মূলত তা হবে 'জাতীয় রাষ্ট্র' এবং এর ভিত্তি হবে 'জাতীয়তাবাদ'। তিনিই প্রথম জাতীয় রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করেন। জাতীয়তাবাদী চেতনার আলোকে 'জাতীয় রাষ্ট্র' গড়ে উঠার পেছনে ষোলো শতকের রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনও প্রেরণা যোগায়। জাতীয় রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক ভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে জ্যা বোঁদা-এর অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনিই প্রথম সার্বভৌমিকতার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করেন। প্রধানত সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব।
Title
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা - রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ - অনার্স চতুর্থ বর্ষ