ইতিহাস কেবলই আমাকে পিছু টানে। কোনো ঐতিহাসিক স্থান দর্শনকালে ধ্বংসস্তূপের ওপর ইতিহাস সজীব হয়ে আবির্ভূত হয়। বর্তমানকে মুছে ফেলে অতীত মূর্ত হয়ে ওঠে। আমাকে প্রবলভাবে টানে সেসব দ্রষ্টব্য স্থানকে ঘিরে প্রচলিত নানা কাহিনী, জনশ্রুতি তথা কিংবদন্তি। কিংবদন্তির অলৌকিক রহস্যময়তা সর্বকালে, সর্বদেশে মানুষকে আকর্ষণ করে এসেছে। তাই কিংবদন্তির আবেদন চিরন্তন। মানব মনের স্বতঃস্ফূর্ত চিন্তা-ধারণা-কল্পনা নিয়েই কিংবদন্তির জন্ম। কিন্তু কিংবদন্তি রূপকথা নয় কিংবা নয় কল্পলোকের কোনো আজব স্থান। কিংবদন্তির দেশ হলো বাস্তব সত্য। কিংবদন্তির ঘটনাস্থল বাস্তবে দেখা যায়। তাই কিংবদন্তি একান্তভাবে দ্রষ্টব্যাশ্রয়ী। এর অর্ধেক ইতিহাস আর অর্ধেক কল্পনা। 'কিংবদন্তির একটি বিশেষ গুণ এই যে, এর বক্তব্য কোনো না কোনো নিদর্শনীয় বস্তুতে আশ্রিত।' তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রচিত হয় ইতিহাস। কিন্তু এক সময় সে ইতিহাস থেমে যায়, ব্যাহত হয় ইতিহাসের অগ্রযাত্রা তথ্য-প্রমাণাদির অভাবে। আর সেখান থেকেই যাত্রা শুরু হয় কিংবদন্তির। ইতিহাস থেমে গেলেও মানুষের কল্পনা থেমে থাকে না, থেমে থাকে না তার ভাব, আবেগ; তাই বাস্তব ও কল্পিত ঘটনার মিশেল ঘটিয়ে দেয় কিংবদন্তির জন্ম। ইতিহাস যেখানে নীরব, কিংবদন্তি সেখানে সরব।