সারসংক্ষেপ পৃথিবীর সকল সচেতন মুসলিম ‘তাকওয়া’ ও ‘মুত্তাকী’ শব্দ দুটির সাথে পরিচিত। বর্তমান মুসলিমবিশ্বে অতি উচ্চ স্তরের মু’মিন ব্যক্তিকে মুত্তাকী বলা হয়। ফলে কুরআন পড়তে গিয়ে মানুষ শুরুতেই খটকায় পড়ে যায়। কারণ, সুরা বাকারার ১ম আয়াতটি হলো মুতাশাবিহাত (হুরুফে মুকাত্তা‘য়াত)। এ ধরনের আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা করা নিষেধ। তাই, প্রকৃতভাবে সুরা বাকারার শিক্ষণীয় ১নং আয়াতের বক্তব্য হলো- এটি (কুরআন) মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত গ্রন্থ। অর্থাৎ মুত্তাকী শব্দের প্রচলিত অর্থ অনুযায়ী আল কুরআন হতে শুধু অতি উচ্চ স্তরের মু’মিনগণ হিদায়াত পাবে। অথচ প্রকৃত তথ্য হলো- ‘তাকওয়া’ অর্থ আল্লাহ সচেতনতা। আর ‘মুত্তাকী’ হলো সে ব্যক্তি যে জন্মগতভাবে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের শক্তি আকল/Common sense/ বিবেকের জ্ঞানকে জীবন পরিচালনায় কাজে লাগায়। তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত এবং জন্মগতভাবে লাভ করা জ্ঞানের শক্তিটির একটি তথ্যও জীবন পরিচালনায় কাজে লাগায় সে মুত্তাকী। তবে সে সর্বনিন্ম স্তরের মুত্তাকী। বইটিতে এ বিষয়টি কুরআন, সুন্নাহ ও আকল/Common sense/ বিবেকের সুস্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশাকরি বইটি মানব সভ্যতা ও মুসলিম জাতির জন্য অনেক কল্যাণ বয়ে আনবে।
প্রফেসর ডা. মাে. মতিয়ার রহমানের জন্ম বাংলাদেশের খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার আরজি-ডুমুরিয়া গ্রামের এক ধার্মিক পরিবারে। নিজ গ্রামের মাদ্রাসায় তাঁর শিক্ষা জীবন আরম্ভ। ছয় বছর মাদ্রাসায় পড়ার পর তাঁকে ডুমুরিয়া হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালে তিনি যথাক্রমে ডুমুরিয়া হাইস্কুল ও সরকারী বি.এল কলেজ, দৌলতপুর, খুলনা থেকে কৃতিত্বের সাথে এস. এস. সি. ও এইচ.এস.সি পাস করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে MBBS পাস করেন। দ্বিতীয় ও ফাইনাল প্রফেশনাল MBBS পরীক্ষায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ১০ম স্থান অধিকার করেন। MBBS পাস করে তিনি সরকারী চাকুরীতে যােগ দেন এবং ১৯৭৯ সালে ইরাক সরকারের চাকুরী নিয়ে সেদেশে চলে যান। ৪ বছর ইরাকের জেনারেল হাসপাতালে সার্জারী বিভাগে চাকুরী করার পর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান এবং ১৯৮৬ সালে গ্লাসগাে রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জনস থেকে জেনারেল সার্জারীতে FRCS ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে ফিরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে কনসালট্যান্ট হিসেবে যােগদান করেন। সর্বশেষ তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রফেসর এবং সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ল্যাপারােসকোপ (Laparoscope) যন্ত্র দিয়ে একক হাতে। (Single Handed) পিত্তথলির পাথর (Gall Bladder Stone) অপারেশনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ সার্জন (surgeon)। প্রফেসর ডা. মাে. মতিয়ার রহমান চিকিৎসক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি দীর্ঘ দুই দশক ধরে কুরআন গবেষক হিসেবে মৌলিক কাজ করে আসছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় হলাে- ইসলামের সে সকল মূল বিষয় যা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য এবং বর্তমান বিশ্বের মুসলিমদের জ্ঞান ও আমলের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। ইতােমধ্যে তার লেখা ৩৯টি গবেষণাধর্মী পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে। এসব পুস্তিকায় তিনি মুসলিম সমাজে প্রচলিত জ্ঞানগত ভুল ধারণার সংস্কার করে কুরআন, সুন্নাহ ও Common sense -এর আলােকে ইসলামের সঠিক তথ্য তুলে ধরেছেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য কাজ হলাে ‘আল কুরআন যুগের জ্ঞানের আলােকে অনুবাদ’। এ অনুবাদখানির সম্পাদনা পরিষদের নেতৃত্ব তিনি দিয়েছেন।