মুখ আমি বন্ধই রাখি তবে আজ কয়েকটি কথা না বলে পারছি না। যেকোনো সাহিত্য তথা গল্প-উপন্যাস-নাটকের সৃষ্ট চরিত্রগুলো খুব ধড়িবাজ হয়। এরা নিজেদের স্রষ্টা অর্থাৎ লেখকের কথা একটুও শোনে না। লেখক তাঁর কল্পনার রং ঢেলে একটু একটু করে তাদের সৃষ্টি করেন। গল্প বা উপন্যাসে একটু পায়ের তলায় মাটি পেলে অথবা একটু গায়ে গতরে বেড়ে উঠলেই চরিত্রগুলো লেখকের ঘাড়ের ওপর যে মাথা আছে সেই মাথায় চেপে বসে। চরিত্ররা তখন লেখককেই ঘাড়ে ধরে চোখ পাকিয়ে বলে, বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে ! চমৎকার! ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার। অর্থাৎ আমরা যেভাবে বলছি সেভাবেই লেখো। তোমার কথা এখানে আর চলবে না বাছা। অন্তত আমার ক্ষেত্রে এরকমটাই হচ্ছে। ওরা আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়। আর আমি নিমিত্ত মাত্র, শুধু লিখে যাই। এই বইয়ের বিভিন্ন গল্পের চরিত্ররা বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক সাহেবদের টেবিলে কখনো ধরনা দিয়ে আবার কখনো হাউ কাউ করে নিজেদেরকে সেইসব পত্রিকায় প্রকাশ করে ফেলত বিভিন্ন সময়। এই যেমন দেখুন না, তারা বেশ কিছুকাল এই বইয়ের প্রকাশক মহাশয়ের দপ্তর দখল করে বসে ছিল। কী সব ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে নিজেদেরকে বই আকারে প্রকাশ করে ফেলেছে। এতে লেখক হিসেবে আমার তেমন কোনো কৃতিত্ব নেই। এই বইয়ের ক্ষেত্রে যদি কারোর কোনো কৃতিত্ব থেকে থাকে তাহলে তিনি আমার একমাত্র স্ত্রী রেজওয়ানা নাসরীন চৌধুরী ও আমার অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী। কারণ এইসব মতলববাজ চরিত্ররা যখন আমার সাথে পেরে উঠত না তখন আমার স্ত্রীর মাধ্যমে আমাকে বহু পরামর্শ দিত ও নানারকম চাপ প্রয়োগ করত। আর তাতেই আমি কুপোকাত হয়ে যেতাম। কোন্ পুরুষ বউয়ের কথা উপেক্ষা করতে পারে বলুন! তাই এই বই যদি পাঠকদের ভালো লাগে তার সকল কৃতিত্ব আমার স্ত্রী, প্রকাশক ও সমস্ত শুভানুধ্যায়ীদের। আর যদি কোনো কমতি থাকে তা হলো আমার। কারণ কোনো কোনো সময় আমি কারোর কথা না শুনে নিজের প্রভাব বজায় রেখে গোঁয়ারতুমি করেছি। আরেকখানা কথা। এই বইয়ের সকল চরিত্র, স্থান, কাল, পাত্র আমার অনুর্বর মস্তিষ্কের উদ্ভট কল্পনামাত্র। কোনো জীবিত, অর্ধ জীবিত, পৌনে বা সোয়া জীবিত কিংবা মৃত কারোর সাথে মিলে গেলে যিনি মেলাতে চেষ্টা করছেন দ্বায়ভার একমাত্র তাঁর, লেখক বা প্রকাশকের নয়, মানে আমাদের নয়। আফটার অল সবই তো কাল্পনিক। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন । সকল পাঠকদের অসংখ্য শুভকামনা। হ্যাপি রিডিং।