শুনতে বেশ ভালো' কথাটির অন্তত দুটি অর্থ আছে। প্রথমত এবং প্রধানত যে অর্থের কথা আমরা ভাবি, সেটা যে, যা বলা হয়েছে, অর্থাৎ বলার বিষয়টা শ্রোতার ইচ্ছা বা মনোভাবের অনুকূল, এই বক্তব্য শ্রোতা শুনতেও চেয়েছে এবং শুনে তার পছন্দ হয়েছে। দ্বিতীয় অর্থ হল, কথাগুলির 'ধ্বনিগত' রূপ কানের অনুকূল, অর্থাৎ সেগুলি শ্রবণেন্দ্রিয়ে এক ধরনের স্বচ্ছন্দ রণন তৈরি করে। এই দ্বিতীয় অর্থের মধ্যে বলার বিষয়টা সম্বন্ধে কোনো ইঙ্গিত নেই; বলার কথাটা বা বিষয়টা যাই হোক না কেন, কথাগুলির শ্রুতিগত রূপ বেশ আকর্ষক, শুদ্ধ সেইটুকুই বোঝানো হচ্ছে। তৃতীয় আর একটি অর্থও নিশ্চয়ই বার করা যায়। কথাটা 'যেভাবে বলা হচ্ছে তা বেশ পছন্দসই'। এই 'যেভাবে' কথাটা তখন ব্যাখ্যা করতে হবে। 'যেভাবে' মানে কী? যেভাবে সাজানো হয়েছে শব্দগুলি? বক্তার কণ্ঠস্বরে বিনয় বা নম্রতা বা মাধুর্য ছিল? বক্তা শ্রোতার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে কানের কাছে গুনগুন করে কথাগুলি বলেছে? Sweet nothings যে ভাবে বলা হয়? বা হাতে হাত রেখে বলেছে? সে সব অনুমানের মধ্যে যাব না আমরা এখন-তৃতীয় অর্থের বহুপ্রকোষ্ঠযুক্ত ফাঁদে ধরা দিয়েও এখন আমাদের দরকার নেই। আমাদের লক্ষ্য হল দ্বিতীয় অর্থ, যে অর্থ হল কথাটা 'কানে' শুনতে বেশ ভালো।' অর্থাৎ কথাটার ধ্বনিপরম্পরা কানের পর্দায় এবং বলা বাহুল্য, মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কোষগুলিতে, একটা রম্য শ্রুতিবেদন তৈরি করে। এই অর্থ থেকেই ধ্বনি-নির্ভর সৌন্দর্য-তত্ত্বের কিছুটা আভাস আমাদের তৈরি করতে হবে। এই সৌন্দর্যতত্তের একটা আদিম ধারণা পাচীন যুগ থেকেই আছে।
পবিত্র সরকার নামক ঘটনাটির বর্ণনা করা খুব সহজ কাজ নয়। এক হল তাঁর শিক্ষাদীক্ষা ও অধ্যাপনার উজ্জ্বল র্জীবন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও এমএ-তে দু-বার প্রথম হওয়া, ফুলব্রাইট বৃত্তি পেয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিজ্ঞানে এমএ ও পিএইচ ডি করেছেন, যাদবপুরে পড়িয়েছেন প্রায় সাতাশ বছর, বিদেশে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে দু-বছর, এবং এখনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নানা কলেজে এমএ-র ক্লাস নিয়ে অক্লান্ত থাকছেন। রবীন্দ্র-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন সাত বছর, ছ-বছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিক্ষা সংসদের সহ-সভাপতি। লেখাতেও অক্লান্ত ও বহুমুখী। ভাষাবিজ্ঞান ও ব্যাকরণ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব, লোকসংস্কৃতি, ইংরেজি শিক্ষা, রম্যরচনা, শিশুদের জন্য ছড়া গল্প উপন্যাস রবীন্দ্রসংগীত, আত্মজীবনকথা—সব মিলিয়ে তার নিজের বই সত্তরের উপর, সম্পাদিত পঞ্চান্নটির মতো। গান তার প্রিয় ব্যসন। এক সময়ে নান্দীকারে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় অভিনয়ও করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ এ ত্রিপুরা সরকারের একাধিক ভাষা-বিষয়ক কমিটি ও কমিশনের অধ্যক্ষ করেছেন। ‘মৃত্যু’ সম্বন্ধ লিখেছেন, কিন্তু এখনও দাপটে বেঁচে থাকার সাধনা করে যাচ্ছেন এই সতেজ মানুষটি।