ফ্ল্যাপে লিখা কথা রত্ন প্রসবিনী বঙ্গজননী। বাঙলা-মায়ের গর্ভে অনেক রত্ন, অনেক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক জাত হয়েছেন। বঙ্গজননীর অঙ্কে লালিত ও প্রতিলালিত এ সকল রত্ন ধরাপৃষ্ঠে এসেছেন, ধরণীকে দেখেছেন, ধরণীকে জয় করেছেন, বাঙলাকে বিশ্বের দরবারে নিজ প্রতিভায় পরিচিত দান করে ইতিহাসে এক অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করেছেন । বিচিত্র ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বঙ্গজননীর তেমনি এক সুযোগ্য ও সার্থক সন্তান ছিলেন পন্ডিতপ্রবর শ্রীহীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৩৮-১৯৪২) । জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি সারস্বত সাধনায় নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন। ইংরেজি ভাষায় অত্যন্ত পারদর্শী হয়েও শ্রীহীরেন্দ্রনাথ দত্ত বেদ-বেদান্তে গভীর অনুরাগী ছিলেন। বাঙলাভাষার প্রতি বিশেষ অনুরাগী , এবং মনে -প্রাণে, ধ্যানে-স্বপনে ও আচার আচরণে একজন প্রকৃত বাঙালি হলেও ইংরেজি ভাষায়ও তিনি বহু প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা রচনা করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। দার্শনিক বঙ্কিমচন্দ্র শ্রীহীরেন্দ্রনাথ দত্ত লিখিত একটি অতি জনপ্রিয় গ্রন্থ। যতদূর জানা যায়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থটি প্রকাশিত হলেও বর্তমানে গ্রন্থটি দুষ্প্রাপ্য। পি-এইচ,ডি ও পোষ্ট ডক্টরাল গবেষণায় প্রায় অর্ধযুগ কলকাতায় অবস্থান করেও গ্রন্থটি সঙ্কলক ও সম্পাদক মহোদয়ের দৃষ্টিগোচর হয়নি।পরবর্তীতে পরিচয় সাময়িকপত্রের কয়েকটি ধারাবাহিক সংখ্যায় তিনি দত্ত মহোদয়ের লিখিত এই পুরো গ্রন্থটি পেয়ে যান। আর তাঁরই সঙ্কলক ও স্বনিষ্ঠ সম্পাদনায় আমরা বর্তমান গ্রন্থটি বাঙালি পাঠক-পাঠিকা এবং কৌতূহলী গবেষকদের হাতে তুলে দিতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি। বঙ্কিমচন্দ্রের দর্শনচিন্তার একটা সার্বিক পরিচয় দেয়ার উদ্দেশ্যে সম্পাদক মহোদয় মূল গ্রন্থের সাথে আরও কয়েকটি প্রবন্ধ সংযোজন করেছেন। এর মধ্যে শ্রীভবতোষ চট্রোপাধ্যায় এর বঙ্কিমচন্দ্রের ধর্মতত্ত্ব, শ্রীভবতোষ দত্ত- এর বঙ্কিচেতনায় মানবপ্রকৃতি, এবং শ্রীভবতোষ দত্ত্ এর বঙ্কিমকল্পিত মানবধর্ম উল্লেখযোগ্য। বঙ্কিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে মুসলিম-বিদ্বেষের কল্পিত অভিযোগ খণ্ডন করতে গিয়ে তিনি আরও কয়েকটি প্রবন্ধ বর্তমান গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এগুলো হচ্ছে যথাক্রমে শ্রীসরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বঙ্কিমচন্দ্রের স্ব-বিরোধ, জনাব রেজাউল করিম-এর বঙ্কিমচন্দ্র কি মুসলমান-বিদ্বেষী ছিলেন?, জনাব আজহারউদ্দিন খাঁন-এর বঙ্কিমসাহিত্য মুসলমান, শ্রীভরদ্বাজ-এর বঙ্কিমচ্ন্রদ এবং ইতিহাসের একটি বিস্মৃত অধ্যায়, এবং অধ্যাপক হাসনা বেগম এর বঙ্কিম-এর সার্ধশত চন্মবর্ষ :কিছু কথা। পরিশেষে ১২৯১ বঙ্গাব্দে প্রচার পত্রিকায় প্রকাশিত কঙ্কিমচন্দ্রের হিন্দুধর্ম প্রবন্ধটি সংযোজন করে অন্তিমপর্বে বঙ্কিমচন্দ্র ও আদি ব্রাহ্মসমাজ শিরোনামে বঙ্কিম-রবীন্দ্র বিতর্কের প্রলয়জটিকা সম্পর্কে সম্পাদক মহোদয় তাঁর নিজের গবেষণালব্ধ ফল তুলে ধরে গ্রন্থে সমাপ্তি টেনেছেন। অন্যান্য গ্রন্থের মতো তাঁর এ সম্পাদিত গ্রন্থটি পাঠকনন্দিত হবে বলে আমাদের ঐকান্তিক প্রত্যাশা।ভ