১৯২৩ সালে কাফকার মৃত্যুর এক বছর আগে কাফকার জীবনে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। এক সকালে বার্লিনের স্টিগলিৎজ পার্কে হাঁটার সময় তিনি খেয়াল করলেন ছোট্ট বাচ্চা একটি মেয়ে আকুল হয়ে কাঁদছে। মেয়েটি তার পুতুল হারিয়ে ফেলেছে। কাফকা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নিজেকে পুতুলের পোস্টম্যান হিসেবে পরিচয় দেন এবং জানান তার পুতুল ভ্রমণে বের হয়েছে আর তাকে চিঠি লিখেছে। পরের দিন তিনি নিজে পুতুলের চিঠি তার হাতে বুঝিয়ে দিবেন— এই প্রতিশ্রুতি থেকেই শুরু। এরপর পাক্কা তিন সপ্তাহ। এই তিন সপ্তাহ ধরে কাফকা গভীর মনোযোগে প্রতিদিন পুতুলের হয়ে চিঠি লিখেছেন বাচ্চা মেয়েটিকে আর মেয়েটিও পুতুল হারানোর বেদনা ভুলে তার সাথে মেতে উঠেছে ভ্রমণের আনন্দে। যদিও শেষ পর্যন্ত মেয়েটি এবং চিঠিগুলোর কী হয়েছে তা আর জানতে পারেনি কেউ। কাফকার এই গল্প সত্যি নাকি মিথ্যা তা নিয়ে নানারকম গল্প আছে। তবে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত রোনাল্ড হেয়ম্যানের লেখা ফ্রানৎস কাফকার জীবনী গ্রন্থে এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। হেয়ম্যানের মতে ডোরা ডিয়ামান্ট, কাফকার সেই সময়ের সার্বক্ষণিক সঙ্গী নিজে এই ঘটনার কথা জানিয়েছেন মার্থা রবার্ট নামে এক ফরাসি অনুবাদক এবং প্রবন্ধকারকে। কাফকার এই অসাধারণ ঘটনা নিয়ে নানা জল্পনা—কল্পনা, অনুসন্ধান যেমন হয়েছে তেমনি লেখা হয়েছে অনেক গল্প এবং প্রবন্ধ। এই গল্প নিয়ে স্প্যানিশ লেখক জর্ডি সিয়েরা আই ফ্যাবরার এই বইটি ২০০৭ সালে শিশু সাহিত্যে স্পেনের জাতীয় পুরস্কার জিতে নেয়। কাফকা এবং ছোট্ট মেয়েটির মায়াময় গল্প একদিকে যেমন আনন্দ দিবে শিশু—কিশোর—বয়স্ক পড়ুয়াদের, তেমনি ভালো লাগবে যেকোনো কাফকা প্রেমীর কাছেও।