প্রশ্নোত্তরে বাঙলাদেশের প্রত্নকীর্তি দ্বিতীয় খণ্ড গ্রন্থটি অমূল্য তথ্যে পরিপূর্ণ। এই গ্রন্থে বিশেষ করে তুলে ধরা হয়েছে দক্ষিণ প্ৰত্বকীর্তিসমূহ, উয়ারী-পশ্চিম বঙ্গের বটেশ্বরসহ বৃহত্তর ঢাকা জেলার হিন্দু-বৌদ্ধ যুগের বিভিন্ন প্রাচীন কীর্তি, ঢাকা শহরের মুসলিম আমলের কীর্তি এবং বিশেষ করে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার লালমাই ময়নামতির কীর্তিসমূহ, বারবাজার ও বাগেরহাটের কীর্তিসমূহ। শুধু প্রত্নকীর্তি নয়, বাংলাদেশের ভৌগােলিক পরিচয়, নিসর্গ, অতি প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে এখানকার মানববসতি ও মানুষের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এই গ্রন্থে আছে। তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এই সুন্দর ভূখণ্ডে স্মরণাতীত কাল থেকে আমাদের পূর্বসূরিরা যে অসংখ্য কীর্তিস্থাপন করেছিলেন সেগুলির মধ্যে অনেক কীর্তিই হারিয়ে গেছে। যেসব কীর্তি বা যার ধ্বংসাবশেষ আজও টিকে আছে সেসব প্রত্নতত্ত্ব নিবেদিত প্রাণ আবুল কালাম মােহাম্মদ যাকারিয়া সারাজীবনের অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই গ্রন্থে আলােকপাত করেছেন এবং আমাদের অতীতকে জানার সুযােগ করে দিয়েছেন। প্রাঞ্জল ভাষায় ও প্রশ্নোত্তরে প্রদত্ত বর্ণনার সঙ্গে এই গ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে প্রায় প্রত্যেকটি বিশিষ্ট প্রাচীনকীর্তির আলােকচিত্র। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহিত সেসব আলােকচিত্র গুণগত উৎকর্ষেও গ্রন্থের আকর্ষণ ও গ্রহণযােগ্যতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। এ গ্রন্থে আরও সংযােজিত হয়েছে হাতে আঁকা অনেক নক্শা, প্রধান প্রধান প্রত্নকীর্তির ভূমি-নক্শা যা এই প্রামাণ্য গ্রন্থের প্রামাণ্যতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণে। আমরা কোনাে ভূঁইফোড় জাতি নই, আমাদের হাজার হাজার বছরের পুরাতন ইতিহাসঐতিহ্য আছে এবং বিশ্বের দরবারে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াবার মতাে ও গর্ব ব্রার মতাে অতীত যে আমাদের আছে সেসব অতি নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন এই গ্রন্থে আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া। বাংলা ভাষায় এ বিষয়ে তিনিই প্রথম লেখক। এটি একটি মূল্যবান গ্রন্থ এবং আমাদেরসহ উসূরিদের জন্য একটি প্রামাণ্য দলিল।