পরিদৃশ্যমান জগতে আমরা সৌন্দর্যের যে চিরচলিষ্ণু লীলা নিরীক্ষণ করি, তাহা আর্ট নয়, প্রকৃতি। প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-শব্দে সৌন্দর্যের অবিরাম স্রোত চলিয়াছে। বিশ্বের প্রথম মানবসন্তান এই বিরাট সৃষ্টির সম্মুখে দাঁড়াইয়া এই অপরূপকে প্রেম-বিমুগ্ধ অন্তরে, বিস্ময়-বিমূঢ় দৃষ্টিতে বরণ করিয়া লইয়াছিল এবং সেই অবধি কত প্রশ্ন তাহার মনে ভিড় করিয়া আসিতেছে। সে জানিতে চায়, আর্ট ও প্রকৃতি- আর্ট কাহাকে বলে বুঝিতে চায়, হইতে চায়। বিশ্বের সৌন্দর্যকে সে আপনার মধ্যে পাইতে। চায়। এইজন্যই সে বাতাসের মর্মরধ্বনিকে, সাগরের কল্লোলকে, বিহঙ্গের কলরবকে, আকাশের নীলিমাকে নিজের মতো করিয়া পাইতে চায়, রূপ দিতে চায়। মনীষী Tolstoy বলেন যে, শিল্পীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা-প্রসূত অনুভূতি রং রেখা শব্দ বা রূপকের সাহায্যে অন্যের মনে সঞ্চারিত করাই আর্টের উদ্দেশ্য। সুতরাং তাঁহার মতে আর্টের উদ্দেশ্য শুধু অনুভূতি-সঞ্চার। কিন্তু কোন্ জাতীয় অনুভূতি, সেই সম্বন্ধে তিনি বিশেষ কিছু বলেন নাই। ইহার ফলে, অনুভূতির ইতরবিশেষের জন্য শিল্পের শ্রেষ্ঠত্বের তারতম্য হইতে পারে, এই প্রশ্নেরও মীমাংসা তাঁহার উক্তিতে ধরা পড়ে নাই। এই কথা অবশ্য সত্য যে, আর্টের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ থাকে, কিন্তু অনুভূতি-সঞ্চারই আর্টের উদ্দেশ্য নয়। বরং সেই অনুভূতি আর্টের মাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশিত হয় যেন উহাতে শিল্পীমন ও দ্রষ্টার মনের পরিচয় নিবিড়তর হইয়া ওঠে-পরস্পর পরস্পরকে ভাল করিয়া, গভীর করিয়া পরিচয় করিয়া লয়। ইহাকে অনুভূতি-সঞ্চার না বলিয়া 'transmission of understanding' বা পরিচয়বোধ-সঞ্চার বলিলে বরং সমীচীন হয়। কারণ, কোন শিল্প-সৌন্দর্যের প্রভাবে মনে যে অনুভূতির সঞ্চার হয়, উহার মধ্যে উদ্বেলতা থাকে না, অনুভূতি যেন ধীর স্থির শান্ত হইয়া পরম বিস্ময় বা শ্রদ্ধায় আনত হইয়া পড়ে। এইজন্যই এই অবস্থাকে বর্ণনা করিতে গিয়া