“এই বইটি আপনাদের জন্য কী করতে পারে।” এ বইটিতে জীবনে চলার পথে প্রয়োজনীয় কৌশলাদির সংকেত সম্বন্ধে লেখা হয়েছে এবং এর সাথে আরো অনেক উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, যে সব প্রমাণ করে যে, আপনাদের কারো কোনোভাবেই কোনো কিছু দ্বারা পরাজিত হওয়া ঠিক নয় যাতে আপনি আরো অধিকতরভাবে মনের শান্তি পেতে পারেন, স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারেন, ধরে রাখতে পারেন বিরামহীন শক্তিধারাকে অনির্বার, এ বইটিতে সেই পথনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমার বই এটাই বলতে চেয়েছে আপনার জীবন কীভাবে আনন্দে এবং আত্মতৃপ্তিতে পরিপূর্ণ হতে পারে। আর এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই কারণ আমি অসংখ্য পাঠক এবং অনুশীলনকারীকে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, যারা এ সহজ সরল বিষয়গুলোকে প্রয়োগ করে তাদের জীবনে পূর্বে উল্লেখিত যে অর্জনগুলোর কথা আমি বলেছি সেগুলো তারা তাদের জীবনে অর্জন করেছেন। এটাই নিশ্চয় বলা হতে পারে যে একে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে কিন্তু মানুষের সত্যিকার লব্ধ অভিজ্ঞতায় বইটি যে খাঁটি কিছুর উপর নির্ভরশীল তা যথাযথভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সব মিলিয়ে এটিতো সত্যি যে জীবনের নিত্যদিনের হরেক সমস্যায় অজস্র মানুষ পরাজিত হচ্ছে। তারা অবিরাম সংগ্রাম করছে। সংগ্রাম নিষ্ফল হবার জন্য অবিরত ঘ্যান ঘ্যান করছে, রাগে বিরক্তি প্রকাশ করছে যে, এত করেও জীবন শুধু তাদের দিয়েছে এক বাজে ভাঙ্গাচোরা নিয়তি বাধাগ্রস্ত করেছে তাদের সৌভাগ্যের পথ। একদিক থেকে বলতে গেলে জীবন এমন বিষয় থাকতেই পারে যেমনটি এসেছে অবাঞ্ছিত বাধা কিন্তু এমন এক আত্মশক্তি এবং উপায়ও আছে যা দিয়ে আমরা ঐ বাধাকে নিয়ন্ত্রিত এবং এমন কি মনের জোর ও প্রতিজ্ঞা শক্তিতে তাকে সীমাবদ্ধ করে দিতে পারি। এটা খুবই দুঃখজনক যে, মানুষ তাদের নানাবিধ সমস্যা উদ্বিগ্নতা এবং কষ্টকাঠিন্য দ্বারা পরাজিত হয়ে নিজেদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলে, আসলে এমনটি হওয়া একেবারেই ঠিক নয়। একথা বলে আমি অবশ্যই এ দুনিয়ার মানুষের কষ্ট ও দুঃখ-দুর্দশার কথা অস্বীকার বা সে সব কমিয়ে আনার কথা বলছি না, আবার এও চাচ্ছি না যে ঐসব বৈরীতাগুলো মানুষের উপর তাদের রাজত্ব কায়েম করুক। আপনি হয়ত ঐসব বাধা-বিঘœগুলোকে আপনার মনে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে দিতে পারেন এবং এভাবে আবার ঐ পর্যায় থেকেই আপনি ঘুরেও দাঁড়াতে পারেন। আপনার চিন্তাধারার মহাশক্তিবলে এবং ওসব বৈরি অবস্থাগুলোর উপর আধিপত্য বিস্তার করে। আর এমনটি আপনি করতে পারেন এমন কিছু শিখে যা আপনাকে পথ দেখাবে কীভাবে ঐ ‘বাধা’ নামের আপদগুলোকে আপনি ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারেন ওগুলোর কাছে পদানত না হয়ে। তা করতে হলে সবচেয়ে প্রথম আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, আধ্যাত্মিক শক্তিকে প্রণালীবদ্ধভাবে ওসবের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা, যাতে যা আপনাকে পরাজিত করতে পারত আপনি তাদের পরাজিত করে বিজয়মাল্য বরণ করতে পারেন। খসড়া চিত্রের মাধ্যমে আমি আপনাদের পদ্ধতিগুলো দেখাবো, যাতে আপনারা বুঝতে পারেন ঐ বাধা-বিঘœগুলোকে আপনার সুখশান্তি ও সমৃদ্ধিকে ধ্বংস করে ফেলতে দেওয়া হয়নি। আসলে আপনি যদি পরাজিত হতে চান তবেই শুধু আপনি পরাজিত হবেন অন্যথায় নয়। আর এ বইটি আপনাকে শেখাতে সাহায্য করবে, কীভাবে আপনি পরাজিত হবেন না, হতে পারেন না। এ বইটির উদ্দেশ্য খুবই সোজা এবং সাধারণ। অকপটে আমি স্বীকার করি যে, এতে সাহিত্য বিষয়ক চমৎকারিত্ব্যের কোনো চাতুরী দেখানো হয়নি। ব্যক্তিগত এবং অস্বাভাবিক কোনো পাÐিত্যও এতে দেখাতে চাওয়া হয়নি। এটি সাধারণ একটি বাস্তবসম্মত অকপট কর্মকাÐ ও ব্যক্তিগত বিকাশ সাধনের সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ। পাঠককুলের সুখী আত্মতৃপ্তিকর ও কষ্টার্জিত সফল জীবন লাভের পথিকৃৎ হিসেবে এ বইটি লেখা হয়েছে। আমি সম্পূর্ণরূপে এবং অত্যন্ত আগ্রহের সাথে কিছু নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত ও ফলপ্রসূ নীতিমালার উপর বিশ্বাসী, সেগুলো প্রয়োগ করার পর দেখা গেছে যে, জীবনে তা জয় এনে দিয়েছে। তাই আমার উদ্দেশ্য হলো, ঐসব নীতিমালাগুলোকে এই গ্রন্থে যুক্তিসঙ্গতভাবে, সাধারণভাবে, এবং সহজবোধ্যভাবে সন্নিবেশিত করা, যাতে পাঠকরা তাদের অনুভ‚তি ও প্রয়োজনীয় জ্ঞানের মাধ্যমে ঐ বাস্তব প্রণালীগুলো শিখে তা নিজের জন্য গঠন করে নিতে পারে বিধাতার সাহায্যকে সম্বল করে সেইরূপ জীবনের জন্য, যা সে এতো দিন গভীরভাবে প্রত্যাশা করেছিল। আপনারা যদি গভীর চিন্তার সাথে বইটি পড়েন, যদি এর শিক্ষণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে ডুবে যেতে পারেন, এবং যদি এতে সন্নিবেশিত নীতিমালা ও সূত্রগুলো অধ্যবসায়ের সাথে অনুশীলন করতে পারেন, তাহলে নিজেদের মধ্যে বিস্ময়কর বিকাশকে আপনারা উপলব্ধি করতে পারবেন। খসড়াকৃত ঐসব কলাকৌশলগুলো ব্যবহার করে, যে অবাঞ্ছিত অবস্থার মধ্যে আপনারা কাটাচ্ছেন, তা আপনারা সংস্কার কিম্বা পরিবর্তনও করতে পারেন। প্রশ্ন হতে পারে কীভাবে তা সম্ভব? উত্তর হলো, ওসবের দ্বারা পরিচালিত বা হেরে না গিয়ে বরঞ্চ ওসবের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। অপরাপর মানুষের সাথে আপনার সম্পর্ক তাতে আরো উন্নত হবে। এতে আপনি আরও জনপ্রিয়, শ্রদ্ধেয় ও বিশেষ পছন্দনীয় এক ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারবেন। এসব নীতিমালাগুলোর উপর দক্ষতা লাভ করে আপনি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক সমৃদ্ধি উপভোগ করতে পারবেন। আজ পর্যন্ত অজ্ঞাত, এমন এক সুস্থ সুন্দর স্বাস্থ্য আপনি অর্জন করতে পারেন এবং এক নতুন ও অতীব আনন্দঘন জীবনের মধ্যে আপনি বাঁচতে পারেন। মানুষ হিসেবে আপনার উপযোগিতা বহুগুণে বেড়ে যাবে এবং আপনার প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রও বেড়ে যাবে অনেক গুণ। প্রশ্ন হতে পারে যে, কীভাবে আমি অতটা নিশ্চিত হতে পারি যে, এসব নীতিমালাগুলো চর্চার মধ্য দিয়ে এমন সুফল পাওয়া সম্ভবপর? সহজ উত্তরটি হলো যে, আমরা বহু বছর ধরে নিউ ইয়র্কের মার্বল কলেজিয়েট চার্চে আধ্যাত্মিক কলাকৌশলের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টিশীল জীবনের একটি পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছি এবং খুব যতেœর সাথে শত শত লোকের জীবনে ওগুলোর প্রতিক্রিয়ার দিকে লক্ষ রেখেছি। আমি যা তৈরি করেছি তা এখন আর অযৌক্তিক নিশ্চয়তার ধারাবাহিক কল্পনা জাল বিস্তার নয়, কারণ এই নীতিমালাগুলো এত লম্বা সময় ধরে খুব দক্ষতার সাথে মানুষের মধ্যে কাজ করেছে যে, আজ তা প্রমাণিত এবং নিশ্চিত সত্যিরূপে সুদৃঢ় ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খসড়াকৃত ঐ পদ্ধতি একেবারে যথাযথ এবং মনোমুগ্ধকর, কৃতকার্যভাবে এক বেঁচে থাকার এক পদ্ধতিরূপে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বেশ কয়েকটি বইতে নানান লেখাজোখায়, প্রায় শতখানেক দৈনিক পত্রিকায়, সাপ্তাহিক কলামে, জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে সতের বছরের অধিক সময় ধরে প্রচারিত গাইড পোস্টস নামক ম্যাগাজিনে, অনেক শহরে প্রদত্ত বক্তৃতায় আমি এই একই বৈজ্ঞানিক অথচ সাফল্য লাভের সাধারণ নীতিমালাগুলো মানুষকে শিক্ষা দিয়েছি। আমি তাদের শিখিয়েছি কীভাবে সুন্দর স্বাস্থ্য সুখ লাভ করা যায়। শত শত লোক তা পড়েছে, শুনেছে এবং অনুশীলন করেছে আর একইভাবে তার সুন্দর ফল ভোগ করেছে। আর তাদের দিয়েছে নতুন জীবন, নতুন শক্তি, বাড়িয়েছে তাদের দক্ষতা এবং ব্যাপক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। আর ঠিক এমন অবস্থায় আমার প্রতি অনুরোধ এল অনেকের কাছ থেকে, যে অসাধারণ এই নীতিমালাগুলো পুস্তক আকারে প্রকাশ করা হোক। কারণ এগুলো পড়ে এবং বাস্তব জীবনে অনুশীলন করে আমরা অনেক উপকৃত হবো। নতুন এই সংস্করণটি আমি ‘দ্য পাওয়ার অব পজিটিভ থিংকিং’ নামকরণ করে প্রকাশ করছি। আমি আঙ্গুল তুলে দেখাতে চাই না যে, এই শক্তিশালী নীতিমালাগুলো, যেগুলো এ বইতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ওগুলো আমার আবিষ্কার আমি স্বীকার করি। ওসব আমাদের দেওয়া হয়েছে, সেই মহানতম শিক্ষকের দ্বারা, যিনি চিরঞ্জীব, অক্ষয়, অবিনশ্বর। এ বইয়ের বিষয়গুলো আমাদের সহজ ও বৈজ্ঞানিকভাবে এবং বাস্তবিকভাবে জীবনে কৃতকার্যতা লাভের কৌশলগুলো শেখায়।
ড. নরম্যান ভিনসেন্ট পিল একজন আমেরিকান চিন্তাবিদ, লেখক এবং ধর্মযাজক, যিনি তাঁর লেখনী দ্বারা সারা জীবন দিশেহারা মানুষকে পথ দেখিয়ে এসেছেন। অনুপ্রেরণা ও প্রেষণার শিক্ষা পাওয়া যায় তাঁর লেখা আত্মকল্যাণমূলক বইগুলো পড়লে। নরম্যান ভিনসেন্ট পিল যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও এর বোয়ার্সভিলে জন্মগ্রহণ করেন ৩১ মে ১৮৯৮ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্থানীয় ধর্মযাজক। তিনি বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন এবং মেথডিস্ট হিসেবে নিউ ইয়র্কের সাইয়াকুজ ইউনিভার্সিটি মেথডিস্ট চার্চে যোগ দেন। ১৯৩৩ সালে তিনি একই শহরের ৩০০ বছরের পুরনো মার্বেল কলেজিয়েট চার্চে চলে আসলে মেথডিস্ট থেকে ডাচ রিফর্মডে পরিবর্তিত হন। পিল এবং তাঁর সাথে স্মাইলি ব্লান্টন মিলে এক ধর্মীয়-আত্মোন্নয়নমূলক বই লেখা শুরু করেন। এভাবে এই জুটির দিকনির্দেশনায় আমেরিকায় ‘আমেরিকান ফাউন্ডেশন অব রিলিজিয়ন অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি’ গড়ে ওঠে। ড. নরম্যান পিল পথভ্রষ্ট দিশেহারা মানুষকে নিজেদের সার্বিক গঠন, আত্মোন্নয়ন এবং অনুপ্রাণিত করতে রেডিও, টেলিভিশন প্রোগ্রাম এবং বইয়ের সাহায্য নেন। ১৯৩৫ সালে পিল ‘দ্য আর্ট অব লিভিং’ নামের রেডিও প্রোগ্রাম চালু করেন। এছাড়াও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘গাইডপোস্ট’ ম্যাগাজিনটি ছিল আত্মোন্নয়ন ও উদ্দীপনা জোগাতে ইতিবাচক চিন্তার গুরুত্ব সম্পর্কে। খুবই সাধারণ জীবনযাত্রার ধারক ড. নরম্যান ভিনসেন্ট পিল এর বই সমূহ মানব হিতকর এবং ইতিবাচক চিন্তার বিষয়বস্তু নিয়ে তাঁর সুগভীর গবেষণা ও মননেরই প্রতিফলন। ৯৫ বছরের সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি আত্মোন্নয়নে নিজস্ব চিন্তার তাৎপর্য পথভ্রান্ত মানুষদের আলো দেখিয়ে গিয়েছেন। ড. নরম্যান ভিনসেন্ট পিল এর বই সমগ্র হলো ‘দ্য পাওয়ার অব পজিটিভ থিংকিং’, ‘এনথুজিয়াজম মেকস দ্য ডিফারেন্স’, ‘পজিটিভ ইমেজিং’, ‘ইউ ক্যান ইফ ইউ থিংক ইউ ক্যান’, ‘দ্য অ্যামেজিং রেজাল্টস অব পজিটিভ থিংকিং’ ইত্যাদি। ‘দ্য পাওয়ার অব পজিটিভ’ এর ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ পাঠক কর্তৃক এর সমাদরেরই জানান দেয়। বরেণ্য এই চিন্তাবিদ ও লেখক ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পরলোকগমন করেন।