সামাজিক কিছু অসঙ্গতি, কিছু অনাকাক্সিক্ষত আচার-আচরণকে উপজীব্য করে ‘হরিষে বিষাদে’ রচিত হয়েছে। হাস্যরস সৃষ্টির মাধ্যমে বক্তব্য পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার শৈল্পিক প্রচেষ্টা রয়েছে এ গ্রন্থে। রম্য রচনার গ্রন্থ হিসেবে এটা গাজী মিজানুর রহমানের দ্বিতীয় বই। এর আগে ‘জনান্তিক’ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল তার ‘হাস্যরসের ত্রিভুবন’। রম্যলেখক হিসেবে গাজী মিজানুর রহমানের মনের মধ্যে বাস করে এক স্বপ্ন। লেখকের স্বপ্ন দেশ এবং জাতিকে ঘিরে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা যতই বিরূপ হোক না কেন, লেখক পৌঁছুতে চান একটা বন্দরে যেখানে নোঙর করা আছে ভালোবাসা, ন্যায়নীতি, সুবিচার, সুচিন্তার নৌযান। এটা তাকে প্রায়শ হাতছানি দেয়। নিষ্ঠুর বাস্তবতা থেকে পরিত্রাণ পেতে দু-চারদিনের জন্য পালিয়ে কোথাও যেতে চান তিনি। দেখে আসতে চান আগের বর্ষায় যে লাউ- গাছটার উপরে মাচান করে দেয়া হয়েছিল, তা বেয়ে বেয়ে কতটুকু বড় হয়েছে। দেখতে চান, যে পেয়ারা গাছটায় ফুল এসেছিল, তার ফল কতটা বড় হলো। বাস্তবের রুক্ষ ক্ষ্যাপাটে ভ‚-প্রকৃতির উপর দাঁড়িয়ে তিনি এভাবে নতুন দিগন্তের স্বপ্ন দেখান পাঠককে। রম্যরচনা আর ব্যাঙ্গরচনার মিশেল রয়েছে এ গ্রন্থের প্রতিটি লেখায়। তবে হিংসে নয়, শুভকামনার ঝাঁপিখানি মেলে ধরা আছে বক্তব্যের পাশে।
গাজী মিজানুর রহমান (গাজী মিজান) একজন কবি ও লেখক । এ পর্যন্ত তার পাঁচখানি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। রসরচনায় সিদ্ধহস্ত এ লেখকের ‘রঙ্গরসের ত্রিভুবন’ নামে একখানি প্রকাশিত রম্যগ্রন্থও রয়েছে। ইদানীং তিনি নিয়মিতভাবে দৈনিক নিউ এইজ পত্রিকায় কলাম লিখছেন। দৈনিক সমকাল পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় তার অনেকগুলি মতামত-প্রবন্ধ পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। লেখকের ‘ ষাটের দশকের স্মৃতিকথাঃ বর্তমানের শিকড়সন্ধান ’ গ্রন্থখানি সমাজ-জীবনের নানাবিধ ক্ষেত্র থেকে তুলে আনা ব্যক্তিজীবনের এক প্রতিচ্ছবি । তাতে ইতিহাস , সংস্কৃতি , উন্নয়ন-চিন্তা , অর্থনীতি , লোকজ বিশ্বাস-অবিশ্বাসের এক মহামিলন ঘটেছে । গ্রন্থখানিকে গ্রাম-বাঙ্গলার অতীত এবং বর্তমানের মেলবন্ধনে বিবর্তিত সমাজ-জীবনের এক গবেষণা-গ্রন্থ বলা যেতে পারে । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেয়ার পর গাজী মিজানুর রহমান বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে প্রায় তিরিশ বছর চাকরি করে অবসর নিয়েছেন । গ্রন্থকার নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার কাঠাদূরা গ্রামে ১৯৫৫ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন ।