খুৎব্বাহ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِيْنِ، وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنِ، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى نَبِيِّهِ مُحَمَّدٍ وَآلِهِ أَجْمَعِينَ যাবতীয় প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীন-এর জন্য এবং শুভ পরিণতি মুত্তাকীনদের জন্যই রয়েছে। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। প্রকাশ থাকে যে, প্রাচীন ছাত্রদের একজন শায়খ ইমাম যায়নুদ্দীন হুজ্জাতুল ইসলাম আবূ হামেদ মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ আলগাযালী রহ.-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন এবং তাঁর কাছে হাদীছের বহু কিতাবের দরস সহ বিভিন্ন বিষয়ের ইলম হাসিল করেন। সাথে সাথে আত্মশুদ্ধির সৌভাগ্যও অর্জন করেন। পরিশেষে বিদায়ের পূর্বে একদিন নিজের হালত নিয়ে ফিকির করলেন। ভাবতে ভাবতে অবচেতন মনে নিজেকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি বিভিন্ন বিষয়ের বহু জ্ঞান অর্জন করেছি। যার অধ্যয়নে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান যৌবন-এর বড় একটি অংশ অতিবাহিত করেছি। এখন আমার উচিত ঐ ইলম হাসিল করা যা কাল কিয়ামতে আমার কাজে আসবে। কবরের জগতে শান্তি পৌঁছাবে। আর যে ইলম এমন উপকার করতে অক্ষম তা বর্জন করা। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ. অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট এমন ইলম থেকে পানাহ চাই, যা উপকারে আসে না। যাই হোক, এই চিন্তা তার মাথায় অব্যাহতভাবে পীড়া দিতে থাকল। সমাধান খুঁজতে প্রিয় উস্তায ও শায়খ হুজ্জাতুল ইসলাম
বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ., সংক্ষেপে ইমাম গাজ্জালী ছিলেন একজন সুফিসাধক ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর দর্শন ও চিন্তাধারা বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা সুতা সংক্রান্ত হওয়ায়, সেখান থেকে তার নাম গাজ্জালী হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যেহেতু 'গাজ্জাল' শব্দের অর্থ সুতা। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৪৫০ সাল) ইমাম গাজ্জালী ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই তুস নগরীতেই তার শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্ম নেন, যে যুগে শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। একইসাথে বিস্তার লাভ করেছিলো পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনেরও। ইমাম গাজ্জালী এসকল বিষয়েই দীক্ষা লাভ করেন এবং বিশেষ করে ঐ যুগের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছ থেকে ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। মুসলিম দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, ফিকহশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী । জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান বাগদাদের সেরা বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনা করেন। তিনি তৎকালীন বাদশাহর দরবারেও আসন লাভ করেন। তবে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে তীব্র আকর্ষণ থাকায় তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য দেশ-বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন ও নানা বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম গাজ্জালী রহ. বই রচনার মাধ্যমে তাঁর অর্জিত এসকল জ্ঞান মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমূহ-তে তিনি আলোচনা করেছেন সুফিবাদ, ইসলামি দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে, এবং তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চার শতাধিক। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'আসমাউল হুসনা', 'মিশকাতুল আনোয়ার', 'ফাতাওয়া', 'মিআর আল ইলম', 'হাকিকাতুর রুহু', 'দাকায়েকুল আখবার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১১১১ খ্রিস্টাব্দে (৫০৫ হিজরি) তিনি নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে মৃত্যবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় একজন মনীষী।