জিজ্ঞাসা-১৮৬] নিয়াত কী? সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য মুখে নিয়াত করা কি জরুরি? সমাধান: এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। মনের ইচ্ছার নামই 'নিয়ত'। নিয়তের জন্য মুখে উচ্চারণের বাধ্যবাধকতা নেই। অনেকে আবার মুখে নিয়তের উচ্চারণকে জরুরি মনে করে। 'চার রাকআত জোহরের ফরজ নামাজ, কাবা শরিফের অভিমুখি হয়ে এই ইমামের পেছনে আদায় করছি'- এ জাতীয় নিয়ত উচ্চারণ করাকে তারা ফরজ কিংবা ওয়াজিব মনে করে। তাদের ধারণা, এভাবে নিয়ত না করলে নামাজ আদায় হবে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়- ইমাম রুকুতে চলে গেছেন, তবুও সে পূর্ণ নিয়ত উচ্চারণে ব্যস্ত। এমনকিকখনো এর ফলে রাকআত ছুটে যায়। অথচ মৌখিকভাবে এধরনের নিয়ত করা জরুরি নয়, ফরজ ওয়াজিব তো নয়ই। মনে মনে এতটুকু ইচ্ছা পোষণ করাই যথেষ্ট, 'আমি অমুক নামাজ ইমামের পেছনে আদায় করছি।' নিয়ত হিসেবে এইটুকুই যথেষ্ট। আজকাল মানুষেরা অনেকেই মনে করে, প্রত্যেক নামাজের জন্য আলাদা আলাদা বিশেষ শব্দে নিয়ত করতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই বিশেষ শব্দগুলো উচ্চারণ করেনিয়ত করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নামাজই শুদ্ধ হবে না। আর তাই মানুষেরা প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, অমুক নামাজের নিয়ত কীভাবে করতে হয়? অমুক নামাজের নিয়তের জন্য কী দোয়া পড়তে হয়। মোটকথা, এভাবে নিয়তের বিশেষ শব্দগুলোকে মানুষেরা নামাজের অংশ বানিয়ে নিয়েছে। মনে রাখতে হবে, নিয়ত বিশেষ কোনো শব্দের নাম নয়। নিয়ত হলো অন্তরের সংকল্প। আপনি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ইচ্ছা পোষণ তো উক্ত ঘটনায় মসজিদে নববিতে সালাত আদায় করার ফজিলত তো জানা, কিন্তু যথাসময়ে কাফেলার সাথে রওয়ানা হওয়ার ফজিলত যদিও অজ্ঞাত, তবে তার পরিমাণ মসজিদে নববিতে সালাত আদায়ের তুলনায়ও অনেক বেশি। অনুরূপ জামে মসজিদে সালাত আদায়ের ফজিলত তো জানা, তবে মহল্লার মসজিদ আবাদ করা ও মহল্লার মসজিদের হক আদায়ের ফজিলত বেশি হবে। কারণ আলোচা ক্ষেত্রে জামে মসজিদের
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।