‘খোঙচৎ মণিপুরী ভাষায় রচিত বিচিত্র স্বাদের স্মৃতিচারণমূলক একটি ভ্রমণকাহিনী । বাংলায় ‘খোঙ’ মানে ‘পা’, ‘চৎ' মানে ‘চলা' অর্থাৎ ‘পায়ে চলা’। ১৯৯৯ সালে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফালে প্রথম প্রকাশ। দ্বিতীয় সংস্করণ বেরোয় ২০০৩ সালে । এই প্রকাশনা মণিপুরী সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিক, সমালোচকদের মধ্যে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। কাউকে কাউকে বলতে শোনা যায়, ‘মণিপুরী সাহিত্যে এই প্রথম নতুন এক লেখনীর ধারা সৃষ্টি হলো । কৈশোর থেকে যৌবনে পা দিল মণিপুরী সাহিত্য।' পদ্মশ্রী প্রফেসর নীলকান্ত (বহু গ্রন্থ প্রণেতা কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক) বলেন, ‘এই বই হাতে নিয়ে তিন ঘণ্টায় পড়া শেষ করেছি। আমিও শোণীর মতো এরকম একটি বই লিখে বেঁচে থাকতে চাই।' মণিপুরী সাহিত্যের প্রখ্যাত সমালোচক প্রফেসর এন. তোম্বী সিংহ (নোংমাই পণ্ডিত নামে অধিক পরিচিত) দৈনিক পোফম পত্রিকায় লেখেন, ‘বইটি পড়ে শোণীকে জিগ্যেস করতে চাই— এতদিন কোথায় ছিলে? 'খোঙচৎ' সাহিত্যরস সমৃদ্ধ এক নতুন লেখনী । এসব মন্তব্য পড়ে আমার মনে হলো, কুকি-চীন ভাষার মণিপুরী সাহিত্য থেকে অনুবাদ করে বাংলাভাষী পাঠকদের সঙ্গে এর পরিচয় করে দিলে কেমন হয়— সেই ভাবনা থেকে এই অনুবাদ । মণিপুরী ভাষা চীনা-তিব্বতীয় ভাষাগোষ্ঠীর কুকি-চীন শাখার একটি ভাষা । ইন্দো- এরিয়ান ভাষা বাংলার মতো তত সমৃদ্ধ ভাষা নয়। বাক্যগঠন প্রণালিও বাংলার মতো নয়। হিন্দি, গুজরাটি, উড়িয়া, আসামি ও বাংলার মধ্যে যে তৎসম তদ্ভব শব্দ, বাক্যগঠন প্রণালির মিল রয়েছে, মণিপুরী ভাষার সঙ্গে সেরূপ মিল নেই। অনেক শব্দ মণিপুরী ভাষায় আছে, বাংলায় নেই, অনুরূপ বাংলায় আছে, মণিপুরীতে নেই। এজন্য কোথাও কোথাও শব্দের অপপ্রয়োগ, রচনার প্রবহমানতার ব্যাঘাত ইত্যাদি রয়ে গেছে। এসব ত্রুটি পাঠকসমাজ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। অনুবাদের সময় মণিপুরী ভাষার মূল রচনার ভাব, রস, ব্যঞ্জনা অক্ষুণ্ণ যাতে থাকে, সে চেষ্টা যথাসাধ্য করেছি। এ অনুবাদ পাঠকদের সামান্য আনন্দ দিতে পারলে আমার শ্রম সার্থক মনে করব । আরেকটি কথা, লেখকের মতামতের প্রেক্ষিতে বইটির মূল কাঠামো ঠিক রেখে কিছু কিছু জায়গায় পরিমার্জন-পরিশোধন করা হয়েছে।