একটা সময় ছিল, বঙ্গদেশের গোটা দক্ষিণ অঞ্চল জুড়ে ছিল বিস্তৃত বনভূমি । গঙ্গা নদীর মোহনায় এই গরান বন এ-দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের উত্থান-পতনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে । কখনো এই বনাঞ্চলের দ্বীপমালায় গড়ে উঠেছে জনপদ, কখনো-বা বিরান হয়ে গেছে । উনিশ শতকের মাঝামাঝি নতুন করে বন কেটে বসতি স্থাপন শুরু হয় এখানে । সেই বন কাটতে কাটতে সঙ্কুচিত হয়ে আজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের এলাকা মিলিয়ে দশ হাজার বর্গকিলোমিটার সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে রক্ষিত। এর তিন হাজার চারশ' বর্গকিলোমিটার জলের এলাকা । জলস্থলের এই মহারঙ্গভূমি বড় জীবন্ত; কিন্তু মানুষের জন্য সুস্বাগত নয়। ফলে সৃষ্টি হয়েছে কিংবদন্তি, উপকথা আর দৈবনির্ভরতার অজস্র কাহিনী । সপ্তদশ শতক থেকে বিদেশি ভ্রমণকারীরা এই বনকে উল্লেখ করেছেন ‘আনক্যানি’, ‘গ্রিম', 'আন-হসপিটেবল', 'ট্রেচারাস' ইত্যাদি বিশেষণে । পৃথিবীর সব বিখ্যাত বনেই ‘হোয়াইট হান্টারদের' শিকার কাহিনীর প্রবল প্রতাপ । এই বনে হোয়াইট হান্টার তেমন প্রবেশ করেন নি। এখানে শিকার করেছেন স্থানীয় গরিব শিকারিরা জান বাজি রেখে এবং হাতে-গোনা সরকারি মানুষজন । এই জঙ্গল সুন্দরবন, স্থানীয় মানুষজন বাদা বলতে পছন্দ করেন । এখানকার বাঘ মানুষ খায়, পৃথিবীর আর কোনো জঙ্গল নেই, যেখানকার আর কোনো বন্যপ্রাণী সুন্দরবনের মানুষখেকোর চেয়ে বেশি মানুষ খেয়েছে। বর্তমান গ্রন্থের লেখক আকতারুজ্জামান কামাল বিগত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এই জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছেন।