আমি সবচাইতে বেশি পীড়িত বোধ করি যখন দেখি কোন শিশু যথাযথভাবে একজন বয়স্ককে অনুকরণ করে কাজ করার বা আচরণ করার ফলে একজন বয়স্কের হাতে নিগৃহীত হয়। আমার নিকট পরিবেশে শিশুকে নানাভাবে পীড়িত, লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হতে দেখতে দেখতে এ বোধের উদয় হল যে অনেক বয়স্ক এমনকি শিক্ষিতজনও শিশুর শিশুত্ব, তার বৈশিষ্ট্য, অবস্থান এবং পরিবেশ সম্পর্কে অসচেতন। এ অসচেতনতার ফলাফল শিশুর নিপীড়ন। বয়স্কদের মধ্যে যারা শিশুর সবচাইতে আপনজন, যারা তার শৈশবের নির্মাতা এবং স্রষ্টা, তারা হচ্ছে শিশুর বাবা, মা আর শিক্ষক। শিশুকে সুখী করার সবচাইতে উপযোগী এবং ঘনিষ্ঠতম মানুষ তারা। তাদের শুভবুদ্ধি ও বিবেচনা, স্নেহ ও যুক্তিযুক্ত আচরণ এবং শিশুর বিপদে ও সংগ্রামে সঠিক সাহায্য-সহযোগিতা শিশুকে সুখী করার প্রাথমিক উপাদান। অযৌক্তিক আচরণে অভ্যস্ত বয়স্কদের একজন হিসেবে শিশুকে আর একটু বেশি সুখী করার লক্ষ্যে বইটি শিশুর বাবা, মা ও শিক্ষকদের জন্য রচিত হয়েছে। সে জন্য বইটিকে বয়স্কদের পক্ষ থেকে একজন মায়ের স্বীকারোক্তি এবং দোষ স্খালনের প্রচেষ্টাও বলা যেতে পারে। আগামী দিনগুলোতে নতুন বাবা, মা ও শিশুর শিক্ষকরা আমাদের চেয়ে আর একটু বেশি বিবেচক হবেন, শিশুকে আরও একটু সুখী করার কথা ভাববেন এবং নরম, আর্দ্র বীজতলার মতন একটি শৈশব উপহার দেবেন সেকথা ভেবে বইটি পরিকল্পিত । কোন একজন বাবা, মা বা শিক্ষক সামান্য উপকৃত হলেও আমি আনন্দিত হব । বইটি প্রকাশের বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে জনাব মফিদুল হক ও সাহিত্য প্রকাশ আমাকে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছেন। প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণে আমার পরিকল্পনাকে রূপ দিয়ে সাহায্য করেছে অনুজ আবুল মনসুর ও অশোক কর্মকার।
মমতাজ লতিফের জন্ম ১৯৪৫ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্মাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এক সময় ইউনিসেফের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগের শিশু যত্ন ও বিকাশ নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর বইয়ের মধ্যে অন্যতম: ‘শিশুর মন ও শিক্ষা’, ‘মানবিক শিক্ষার খোঁজে’, ‘গল্পের একদিন’, ‘সূর্য রাজার রাজ্যে’ এবং ‘ছবি ও পড়া’।