মানুষকে, বিশেষ করে পীড়িত জরাগ্রস্ত ও মৃত মানুষকে, দেখেই সিদ্ধার্থের মনে মুক্তির পথ খোঁজার আগ্রহ জাগে। এই পথে তিনি বোধি বা প্রজ্ঞা লাভ করেন। মানবসভ্যতার সূচনার যুগে এই সত্য আবিষ্কার বিস্ময়কর ঘটনা। তিনি অজ্ঞতা, জড়তা, লোভ আর হিংসা-দ্বেষকে তুচ্ছ ও নিন্দা করতে বলেছেন। বলেছেন অন্তর থেকে এসবকে সমূলে উৎপাটিত করতে হবে। মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে গড়ে তোলে তার চিন্তা ও কর্ম— জড় অভ্যাস নয়, অন্ধ বিশ্বাসও নয়। বুদ্ধ কখনো চাননি মানুষ অন্ধ বিশ্বাসের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হোক; মানুষ হবে সক্রিয় উদ্যমী। সন্ন্যাসও এক রকম জড়তা, সেই জড়তার পথ পরিহার করে মনের উন্মেষ চাই, বিকাশ চাই, চাই জিজ্ঞাসা ও সম্যক প্রচেষ্টা। পৃথিবীতে প্রাণ হননের চেয়ে গর্হিত কাজ আর নেই, কারণ প্রাণের চেয়ে দুর্লভ সম্পদ আর কিছুই হতে পারে না। আজকের যুগে মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে হলে দরকার জাতিতে-জাতিতে ধর্মে-ধর্মে সহমর্মী মনোভাব। এ গ্রন্থ হোক তারই আলোকবর্তিকা । মনুষ্যত্ব সাধনাই হোক বর্তমান ও ভাবী যুগের সাধনা। ‘সকল প্রাণ সুখী হোক, শত্রুহীন হোক, অহিংসিত হোক, সুখী হয়ে কাল হরণ করুক। সকল প্রাণী আপন যথালব্ধ সম্পত্তি হতে বঞ্চিত না হোক।' পরিশেষে, ‘গৌতম বুদ্ধ : দেশকাল ও জীবন' গ্রন্থটি শ্রী বিপ্রদাশ বড়ুয়া ও আমি যৌথভাবে রচনা করি। শ্রদ্ধেয় শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় এবং ‘সাহিত্যসমবায়’-এর প্রযত্নে বইটি ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় । প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সুধী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহার আগ্রহেই বইটির বর্তমান সংস্করণ । এই গ্রন্থে বৌদ্ধ-দর্শনসহ কিছু অধ্যায় কিশোরদের কাছে কঠিন মনে হতে পারে ভেবে বর্জন করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু অধ্যায়ও নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে । এছাড়া পরিশিষ্টে নতুন তিনটি জাতক যুক্ত করা হলো ।