"খুব ছোটো একটা পরিবারে বেড়ে ওঠা আমার। বাবা-মা, ভাইয়া আর দাদা। দাদী ও ফুফিরা প্রায়ই বাসায় আসতো। কিন্তু আমার সাথে তাদের আন্তরিকতার সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। যৌথ পরিবারে যেমন সুদৃঢ় বন্ধন থাকে আমি এর সাথে ছিলাম সম্পূর্ণ অপরিচিত। স্কুল-কলেজেও কয়েকজন বান্ধবী ছিল মাত্র। ব্যস, এতটুকুই ছিল আমার জগৎ। সেই আমিই বউ হয়ে আসি বিশাল এক পরিবারে। যেন ছোট্ট একটা ডোবা থেকে পুকুরে নয় সোজা সমুদ্রে এসে পড়লাম। আমার স্বামীরা ছয় ভাই, পাঁচ বোন। আমার স্বামী সবার ছোটো। তাই বিয়ে হওয়ার সাথে সাথেই চাচী, মামী হওয়ার পাশাপাশি নানী-দাদীও হয়ে গিয়েছিলাম। সবাই একসাথে হলে বাচ্চাদের সংখ্যাই ত্রিশ ছাড়িয়ে যায়। আমার বড়ো সমস্যা ছিল সবার পরিচয় মনে রাখা। কিন্তু তাদের বন্ধন এতোই অটুট অল্পদিনেই আমি সবার সাথে পরিচিত হয়ে গেলাম। প্রথমেই আমার বাচ্চাদের সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কেন যেন বাচ্চাদের সাথে আমি বাচ্চার মতোই মিশতে পারি। কিন্তু বড়োদের বেলায় একটু বিপাকে পড়লাম। একেকজন একেকরকম, একেক জনের চিন্তাধারা একেক রকম। একটা কাজে একজন খুশি হলে অন্যজন বেজার হন, কেউ নরমাল একটা কথা বললে আমি বিরাট মনে কষ্ট পেয়ে বসে থাকি, আবার কেউ একটু রাগ দেখালেও সেটা স্বাভাবিক আচরণ ধরে বসে থাকি। এসব ক্ষেত্রে আমার স্বামী আমাকে হাতে-কলমে আমার দায়িত্বগুলো বুঝিয়ে দিয়েছে, কোন ক্ষেত্রে কোনটা ন্যায়সঙ্গত আচরণ হবে শিখিয়েছে। আমি ধীরে ধীরে ঠিকই শিখে নিচ্ছিলাম সব। কিন্তু শুধুই দায়িত্ব মনে করে করছিলাম, তৃপ্তিটা পাচ্ছিলাম না। এসবের মাঝেই নিজে কীভাবে সুখী হবো একদিন হঠাৎ করেই যেন সেই গুপ্তবিদ্যাটার সন্ধান পেয়ে গেলাম। ‘আয়শা’ এই উপন্যাসিকাটা পড়তে পড়তে নিজের ভেতর থেকেই যেন আমার আমিটা বলে উঠেছিল, ‘এতোদিন শুধু জানতাম আমি কী চাই, কিন্তু কীভাবে পাব তা এখন জেনেছি।’ আমি সুখী হবো নাকি হবো না তার চাবিকাঠি আমার নিজের হাতেই থাকবে, অন্য কারো হাতে দেব না, এটাও শিখলাম ‘আয়শা’র কাছ থেকে। এটাও জানলাম ‘আমি একাই সুখী হবো’ এ চিন্তাটা দিয়ে হয়তো একা একাই সুখী হওয়া যায়। কিন্তু একা একা সুখী হওয়ার চাইতেও সবাইকে নিয়ে সুখী হওয়াটা আরো বেশি সুখকর। ‘আয়শা’ অসাধারণ কেউ না। এতোই সাধারণ যে কারো চোখে পড়বে না। কিন্তু তার ব্যক্তিত্বটাই এমন, তার সান্নিধ্যে যে আসবে সে বিস্মিত হবেই। উপন্যাসিকাটা পড়তে পড়তে আমি বারবার নিজেকে আয়শার সাথে মেলাতে চাচ্ছিলাম, ওর জায়গায় আমি হলে কী করতাম, আর ও কী করছে! তারপর আয়শার প্রতিটি কাজে, প্রতিটি সিদ্ধান্তে শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে এসেছে। আমার স্বীকার করতে একটুও বাঁধছে না, উপন্যাসিকাটা পড়ে আমি নিজের মনে বলেছি, ‘আমি আয়শা হবো।’ আয়শা দেখতে সাধারণ গোছের, কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্বে, স্ত্রী হিসেবে, শ্বশুরবাড়িতে বউ হিসেবে, মা হিসেবে সে অনন্য।
ভাষার মাসে জন্ম নেয়া ফৌজিয়া খান তামান্না। সবুজ প্রকৃতি ঘেরা ভীষনই এঁদো গ্রামে বেড়ে ওঠা ফৌজিয়া খান তামান্না আস্তে আস্তে হয়ে ওঠেন ভাষাশিল্পী।কলেজ এবং পরবর্তী লেখাপড়া,সংসার স্থায়িত্ব ঢাকাতে হলেও পুরোটা স্কুলজীবন মায়ের সাথে কেটেছে সেই এঁদো গ্রামেই। আর তাই চলনে, বলনে, চিন্তাধারায় গ্রাম্য প্রভাব প্রকট। এবং তিনি ভালোবেসে এই প্রভাব বয়ে বেড়াতে চান চিরকালই। স্কুল কলেজে লেখালেখি, সাথে জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় নিয়মিত গল্প ছাপা হলেও দীর্ঘদিন লেখালেখির বাইরে অবস্থান করেছেন। অনলাইন দুনিয়ায় নতুন করে লেখার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ উপন্যাস দিয়ে।লেখকের প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় পাণ্ডুলিপি পুরস্কার জয় দিয়ে।একটি পাঠকপ্রিয় সংকলনে প্রকাশিত গল্পের সুত্র ধরে আত্মপ্রকাশ করেন সেই সিরিজ সংকলনের সম্পাদক হিসাবে। দুই সন্তান আর ডাক্তার স্বামীর সংসারে অবসর কাটে বই পড়ে আর ছবি এঁকে। পরম যত্নে বাগান করা তার প্রিয় শখ। লেখকের প্রকাশিত বই-গহীনে আঁচ (উপন্যাস) বইমেলা ২০২১রহস্যলীনা (থ্রিলার সংকলন) বইমেলা ২০২১।