গ্যালিলিও গ্যালিলি বলেছিলেন, "Mathematics is the language in which" অর্থাৎ আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টির পিছনে রয়েছে গণিত। গণিতের মূল দুটি শাখা হলো তত্ত্বীয় গণিত ও প্রায়োগিক গণিত। আমাদের দেশে তত্ত্বীয় গণিতের চর্চা অনেক বেশি হওয়ার কারন সম্ভবত আমাদের মুখস্ত করার প্রবনতা। কিন্তু পাশ্চাত্যের মত আমাদের এখানেও প্রায়োগিক গণিত বা অ্যাপ্লাইড ম্যাথেমেটিক্স এর প্রয়োগ অনেক বেড়েছে। তত্ত্বীয় গণিত অনেক উচ্চ মার্গের বিষয় - সেটি মনেরেখেও বলতে হয় প্রয়োগ ছাড়া কোনো জিনিসের চর্চা জনকল্যাণে আসে না। তাইতো পাশ্চাত্য বিশ্ব এত উন্নতি করেছে। গণিতের বিভিন্ন শাখাকে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করার জন্য অ্যাপ্লাইড ম্যাথেমেটিক্স শাখাটির প্রচলন। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এটিকেও প্রায় তত্ত্বীয় গণিতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে - শিক্ষার্থীরা মুখস্ত করে, পরীক্ষা দেয়, পাস করে ইত্যাদি। কী কাজে এটি ব্যবহৃত হয় তার হিসাব কোনোদিন করে না। যেমন পথে-ঘাটে ছবিতুলে প্রিন্ট করার জন্য অসংখ্য দোকান, কিন্তু এই ছবি প্রক্রিয়াকরণ যে ফুরিয়ার রূপান্তর সূত্র ব্যবহার করে করা হয় তা আমরা জানিই না। আবার মোবাইলে সিগন্যাল সমস্যা একটি বড় সমস্যা- এখানেও যে ফুরিয়ার সিরিজ এর প্রয়োগ আছে তা সাধারণ ব্যবহারকারীর মত গণিতের ছাত্র-শিক্ষকও অধিকাংশ ক্ষেত্রে যানে না। মহাকাশ অভিযান, খনিবিদ্যা, আলোকবিদ্যা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ বিদ্যমান। আবার ক্যালকুলাস, অন্তরক সমীকরণে অনেক জটিল সমস্যা রয়েছে যার ক্যালকুলেশন কম্পিউটার ও বিশেষ সফটওয়্যার ছাড়া অসম্ভব। কিন্তু লাপ্লাস রূপান্তরের মাধ্যমে এই সকল সমস্যাকে আমরা সহজ যোগাশ্রয়ী সমস্যায় রূপান্তর করে সমাধান করতে পারি। অন্যদিকে, বিভিন্ন অন্তরক সমীকরণ ও তাদের সমাধানের মাধ্যমে আমরা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি। যেমন- তাপ সমীকরণ। পদার্থ ও রসায়নের প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তাপ সেমীকরণ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তরঙ্গ কিভাবে উৎপন্ন ও প্রবাহিত হয় তা বেসেল ফাংশনের মাধ্যমে সহজেই হিসাব করা যায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস লেজেন্ডার ফাংশন ছাড়া সম্ভবই নয়। অর্থাৎ ব্যবহারিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গণিতের এই বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই দ্বিমুখী নীতি প্রয়োগ করা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ইংরেজি মাধ্যমে উত্তর করতে বলে, কিন্তু ক্লাসে লেকচারটি দেয় বাংলার মাধ্যমে, যদিও কিছু ব্যতিক্রম আছে। জীবনের শতভাগ ক্ষেত্রে বাংলা ব্যবহারকারী একজন শিক্ষার্থীর জন্য ইংরেজিতে পড়া অনেক সময় দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। আবার বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় ইংরেজির বিকল্প নেই। তাই আমাদের লক্ষ্য হলেও আমরা, যারা বাংলা ভাষায় গণি চর্চা ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে চায়, তাদের জন্যও সুযোগ রাখতে চেয়েছি। ফলে, মূলবই বাংলায় হলেও ইংরেজি অনুবাদ অংশও আমরা যথাসম্ভব রেখেছি, বিশেষ করে ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে।