অন্ধকারমথিত সময়ের বিকীর্ণ পথে বোধের নীল শিখা জ্বেলে একজন হেঁটে চলেছেন। নিঃশব্দে। যা কিছু ধ্বনিময়, তাও যেন অস্ফুট, সঘন। কেননা, জীবন যে মুহূর্তে নিঃসঙ্গতা ও বিরুদ্ধ-বাস্তবতা কবলিত, তা ভোলেন না কবি ফারজানা ফেরদৌস। চারদিকের অন্থিরতা ও শূন্যতার যন্ত্রণা তাঁকে আমর্ম বিদ্ধ করে। ফলে প্রেমের অপ্রাপ্তিও বস্তুজাগতিক ইন্দ্রিয়ঘন কাতরতায় দৃশ্যায়িত হয়। যদিও প্রকৃতি ও পরিপার্শ্ব নিয়ত পরিবর্তনশীল, মানুষও; তথাপি জঙ্গম জীবনে ‘প্রাণপৈতির’র অনুধ্যান বোধ ও বাসনায় ব্যাকুল হয়ে উঠতে দেখি ফারজানার কবিতার পর কবিতায়। একই সঙ্গে পার্শ্বিকতা, বস্তুকাঠামো আর প্রাণের রুদ্ধ আবেগের মধ্যেই যে সময়গ্রন্থি জটিল জটের সূচনা করে, তাতে কবির যাপন হয়ে উঠেছে বিচূর্ণ ও বিকীর্ণ। অন্ধকার ধীর পায়ে ঢেকে দেয় ব্যক্তির আবেগময় অস্তিত্ব- কেবল প্রাকৃতিকতা নয়, ইন্দ্রিয়জ স্মৃতিসত্তাও। তবে, নিঃসঙ্গ এবং অনিকেত হলেও কবির সজাগ চেতনা নিরন্তর আশাবাদী। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ও ধ্বংসের ভেতর তাঁর বিবেকী সত্তা নতুন সভ্যতা সৃষ্টির বেদনা অনুভব করে। ফারজানা ফেনদৌসের কবিতায় প্রায়শই দেখা যায় অচেনা শব্দসংক্রাম। চেনা জগতের কঙ্কাল-নৃত্য থেকে পলায়নের জন্যই কি তিনি বেছে নেন এমন শব্দপুঞ্জ? তবে শব্দের ওই আপাত শক্ত খোলস ভেদ করে করে চলে তাঁর সত্তার ময়ুর পালক ও রং, ফুল ও সমুদ্রের সীমানা। তাই কুয়াশামথিত সময়ের ভেতর দাঁড়িয়ে তিনি উচ্চারণ করতে পারেন, ‘কান্না হবে কম্পমান বনের শিশির।’ এখানেই তাঁর কবিতার স্বাতন্ত্র্য।