যখন মোবাইল ফোন ছিল না, ইন্টারনেট ছিল না। যখন গরমের দিনে দুপুরে ভাত খাওয়ার পরে রাস্তায় লোক চলাচল কমে আসতো, সেই সব ঝিমন্ত দুপুরে বইয়ের পাতা ওল্টানোর শব্দের সাথে সঙ্গত করতো বাইরে কড়ই গাছে কাকের ডাক আর ফুটপাতের উপরে সাইকেল সারাইয়ের টুং টাং। মানস চৌধুরীর গল্প পড়ার সময় মনে হয় সেই রকম অ্যানালগ যুগে চলে গেছি - গল্পের বিষয়বস্তুর কারণে না, বলার ভঙ্গির জন্য। তাঁর গল্পের বিস্তার একাগ্রতা, সময় এবং স্থিরতা দাবী করে। শুরুতে মনে হয় একটা আউট অব ফোকাস লেন্স এর ভিতর দিয়ে দেখছি - সব ঝাপসা। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়। গল্পের বিষয়বস্তু অনেক রকম - প্রেম, প্রেমের প্রস্তাবনা, বন্ধুত্ব, বিচ্ছেদ, যৌনতা, ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিতরের রাজনীতি। গল্পগুলোর শিরোনাম নিজেরাই এক একটা গল্প - একধরণের পরিবেশ তৈরী করে। যেন নামগুলো একএকটা অ্যান্টেনা, অথবা পোর্টাল যার মাধ্যমে আমরা গল্পের নির্দিষ্ট তরঙ্গে পৌঁছাই। তেরো নম্বর গল্পের নাম ‘গুমের কিংবা ঘুমের রাজ্যে’। এই নামেই বইয়ের নাম। বেচারা তেরোর ঘাড়ে বহু আগে থেকেই দুর্ভাগ্যের ভূত সওয়ার। মানস কি এই অশনিপনা নিয়ে একটু খেললেন? যে রাজ্য গুমের এবং ঘুমের, সেখানে অশনিসংকেত তো ক্রমাগত বেজেই যাচ্ছে। মনে পড়ছে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের বইয়ের নাম “আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি”। যাঁরা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক আবহাওয়া সম্পর্কে কিছুটা জানেন অথবা দূর থেকে হলেও টের পান, তারা বইয়ের গল্পগুলো পড়ার আগেই হয়তো এক ধরণের সম্পৃক্ততা বোধ করবেন। - লুনা রুশদী গুমের কিংবা ঘুমের রাজ্যে Manosh Chowdhury প্রচ্ছদ ও শিল্পকর্ম : কেই ইয়াসাকা (জাপানিজ আর্টিস্ট)
জন্ম: বরগুনা, ২৮ মার্চ ১৯৬৯। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক। কথাশিল্পী, সংকলক, অনুবাদক, কলামিস্ট ইত্যাদি। শিল্পকলার পত্রিকা Depart-এর নির্বাহী সম্পাদক। প্রকাশিত গ্রন্থ : নৃবিজ্ঞানের প্রথম পাঠ (রেহনুমা আহমেদ-এর সঙ্গে যৌথ বিরচিত), কর্তার সংসার: নারীবাদী রচনা সংকলন (সায়দিয়া গুলরুখ-এর সঙ্গে যৌথ সম্পাদিত), এইডস ও যৌনতা নিয়ে ডিসকোর্স (সায়দিয়া গুলরুখ-এর সঙ্গে যৌথ বিরচিত), নৃবিজ্ঞান পরিচিতি (প্রশান্ত ত্রিপুরা ও রেহনুমা আহমেদ-এর সঙ্গে যৌথ বিরচিত), মুক্ত আলোচনা (আইনুন নাহার-এর সঙ্গে যৌথ সম্পাদিত), সাম্প্রতিক নৃবিজ্ঞান (নুরুল আলম এবং আইনুন নাহার-এর সঙ্গে যৌথ সম্পাদিত), চর্চা (জহির আহমেদ-এর সঙ্গে যৌথ সম্পাদিত), কাকগৃহ(ছোটগল্প), আয়ানাতে নিজের মুখটা(ছোটগল্প), ময়নাতদন্তহীন একটি মৃত্যু,(ছোটগল্প)।