কয়েক মিনিটের মধ্যেই জামি এসে ঢুকল এই রুমে । তার পায়ের শব্দে ঘুরে তাকাল জয়া। তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেল। পরনের টিশার্ট বদলে খুব সুন্দর একটা পানজাবি পরে এসেছে জামি। দেখতে খুব ভাল লাগছে তাকে। জয়া মুগ্ধ গলায় বলল, আপনি পানজাবি পরতে গেলেন? জামি হাসল। হ্যাঁ। আপনাকে এখন অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে..... কথা শেষ করতে পারল না জয়া। জামি রোমান্টিক গলায় বলল, কী মনে হচ্ছে? জয়ারও তখন গলার স্বর বদলে গেছে। অপলক চোখে জামির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, মনে হচ্ছে আজই যেন প্রথম আপনাকে আমি দেখলাম । লেখা পড়ে যে চেহারা আপনার আমি কল্পনা করেছিলাম, আপনি যেন ঠিক তেমন । আপনাকে দেখেও আজ একই অনুভূতি আমার । মনে হচ্ছে আপনি আমার মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা সেই মানুষটি। না দেখেই যাকে নিয়ে আমি লিখেছিলাম, ‘দূরের মানুষ, তুমি আমার মনের মাঝে রাখা'। একথা শুনে জয়ার মুখ কেমন অসহায় হয়ে গেল । কাতর গলায় বলল, এভাবে বলবেন না। আমার মন কেমন হয়ে যায় । জয়ার একেবারে কাছে এসে দাঁড়াল জামি। দুই করতলে জয়ার মুখটা তুলে ধরল। গভীর মায়াবি চোখে জয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, প্রিয়দর্শিনী, আসলে তুমিই আমার প্রিয়দর্শিনী। তোমাকে কল্পনা করেই আমি লিখেছি, চোখ বুজে দেখ আমার হৃদয় । একথার সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজল জয়া। জামি বলল, ভালবেসে হৃদয়ে আমি কেবল তোমার নাম লিখেছি । জয়া ছটফট করে উঠল, দিশেহারা হলো। জামির কাছ থেকে সরে গিয়ে বলল, আমি এখন কী করব? আমেরিকায় থাকা একজন মানুষের সঙ্গে যে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন! জামি গভীর গলায় বলল, লেখাকে প্রফেসান হিসেবে নেয়ার কথা বলে আমার জীবনের বাঁক তুমি বদলে দিয়েছ। এখন আমার জীবন এক লেখকের জীবন। এই জীবন আমি তোমাকে দিলাম ।
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম। লেখনীশক্তির পাশাপাশি তার রয়েছে নাট্যরচনায় পারদর্শিতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্র ‘কালের কন্ঠ’-এর সম্পাদক পদেও নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিশুতোষ গল্প দিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে এ গুণী লেখকের প্রবেশ, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কিশোর বাংলা’ নামক এক পত্রিকায়। তবে পাঠকের নজরে পড়েছিলেন ‘সজনী’ নামের ছোট গল্প লিখে। খুব অল্প বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ফলে তার লেখার বিষয়বস্তুতে কোনো জটিল সমীকরণের দেখা মিলতো না, পাঠককে বিমল আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে তিনি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে পরিহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমূহ-তে মুক্তিযুদ্ধ, হাজাম সম্প্রদায়ের জীবন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখগাথা, পাটচাষী, গ্রাম বাংলার সমাজের এক নিখুঁত চিত্রও ফুটে উঠতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, তিনি নিজেই লেখার এরকম বিপরীতধর্মী দুটি ধরন আপন করে নিয়েছেন, আর এক্ষেত্রে তার অণুপ্রেরণা ছিলেন সমরেশ বসু। ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নাটক এবং প্রায় দু’শো উপন্যাস। শিশুতোষ গল্প এবং ভৌতিক উপন্যাস রচনাতেও তার জুড়ি নেই। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিশীলতার কারণে বাংলা উপন্যাস ইমদাদুল হক মিলন এর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ না, পশ্চিমবঙ্গেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার বহুল পঠিত উপন্যাস হলো ‘নূরজাহান’। এছাড়াও ইমদাদুল হক মিলন এর উপন্যাস সমগ্র বিভিন্ন পাঠকপ্রিয় উপন্যাসে ঠাসা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘জিন্দাবাহার’, ‘নিঝুম নিশিরাতে’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘কালাকাল’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘পরাধীনতা’, ‘কে’, ‘তাহারা’, ‘ভূতের নাম রমাকান্ত কামার’ ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি নানা সম্মানজনক পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিনি একুশে পদক পান।