সময়ের অন্যতম তরুণ কবি জুবায়েদ মোস্তফা। জাতীয় পত্রিকায় কবিতা, কলাম, ফিচার, চিঠি লিখে নিজেকে অধিক শাণিত করেছেন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের বেশ কিছু জনপ্রিয় পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশ হলে তার খ্যাতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বমহলে । তার কবিতায় বাস্তবতার ছোঁয়া পাওয়া যায়, তবে বিরহের যন্ত্রনা, রোমান্টিকতা, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, প্রভৃতি সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বেদনার আবিল সুর নিয়ে নদীর তীরে বসে থাকো তুমি নিরলে, ঢেউ হয়ে উপনীত হয়ে যায় আমি তোমাকে সঙ্গ দেবার ছলে। কবিতা হচ্ছে ছন্দ, দোলা এবং স্পন্দন নিয়ে রচিত একগুচ্ছ শব্দমালা। অথবা, কবিতা বা পদ্য হচ্ছে শব্দের ছন্দোময় বিন্যাস; যা একজন কবির আবেগ, অনুভূতি, উপলব্ধি, চিন্তাকে সংক্ষেপে এবং উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্পের সাহায্যে উদ্ভাসিত করে আর তা শব্দের ছন্দায়িত ব্যবহারে সুমধুর শ্রুতিযোগ্যতা যুক্ত করে। কবিতা তিনটি অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ অথচ এর বিশালতা আর গভীরতা অকল্পনীয়। হ্যাঁ সত্যিকার অর্থেই অকল্পনীয়। জীবনের প্রত্যেকটি উপাদান আর উপাত্ত নিয়েই কবিতা। একটি জীবনের আলোকে সামগ্রিক জীবন নিয়ে লেখা হয় কবিতা। কবিতা হাসায়, কবিতা কাঁদায়, কবিতা আনন্দ দেয়, কবিতা বেদনা শেখায়। ঠিক তেমনটাই শিখিয়েছে কবি জুবায়েদ মোস্তফার কাব্যগ্রন্থ সাইক্লোনের শহরে সন্ধি। ২০২৩ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ফাতেমাতুন নূর সময়ের সুর প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি জুবায়েদ মোস্তফার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ সাইক্লোনের শহরে সন্ধি শিরোনামে। বইটি প্রচ্ছদ করেছে ফাতেমাতুন নূর। প্রচ্ছদ বেশ মানানসই কাব্যগ্রন্থের কাব্যগুলো অনুসারে। খুবই সাদামাটা না আবার খুব বেশি ঝমকালো নয়; যতটুকু অর্থপূর্ণ হওয়া দরকার ততটুকুই যেন। বইটির পেইজ, বাইন্ডিং বেশ স্ট্যান্ডার্ড মানের। আর যেহেতু কাব্যগ্রন্থ তাই পেপারের ব্যবহার যেন বইটির আউটলুককে আরও পরিপূর্ণ করেছে। কবি মানেই রোমান্টিক আর কবিতা মানেই রোমান্টিকতা। হোক না তা দ্রোহের কবিতাগুচ্ছ সেখানেও চুপিসারে রয়ে যায় কবির অজানা প্রেমের কথা। কবির অজানায় প্রেমের উপাখ্যানে কবি বলেন :– হে নিঃসপ্ত রমণী তোমাকে অবশ্যই আশীর্বাদ হয়ে আসতে হবে, আমার ভালোবাসা আর অধিকার চর্চায় তুমি হবে অদ্বিতীয়। পূর্ণতা অপূর্ণতার সমীকরণ কবিতায় কবি খুব সহজভাবেই বলেন :- মানুষ খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক,স্বার্থপর প্রাণী বা একপাক্ষিক ও বটে। জীবন খাতা জুড়ে প্রাপ্তির বিশাল অধ্যায় লিপিবদ্ধ করতে চায়। অপূর্ণতাকে ঠাঁই দিতে চায় না ক্ষুদ্র এক কোণে, বরং মুছে ফেলতে চায়। অপ্রাপ্তি যে জীবনের অংশ এই ধ্রুব সত্য মেনে নিতে চায় না কেউ। কবিতা এমন একটা ব্যাপার যেটা আসলে পড়ে, অনুভব করে অন্যকে ভাষায় প্রকাশ করে বুঝানোর নয়। তবুও কিছু কথা জড়ো হয় যে কোন কাব্যগ্রন্থ পাঠ শেষেই। এই বইটি পাঠ শেষেও তেমন কিছু কথাই জড়ো হয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থে বেশ কিছু কবিতা আমার হৃদয়ে স্থান পেয়েছে। সবগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করলে এই পর্যোলোচনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে আর পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে। পার্থক্য কবিতায় কবির আক্ষেপটাই যেন প্রতিবাদের ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে ক্ষোভে পরিণত হয়। সেই ক্ষোভটাই যেন কবিকে প্ররোচিত করে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান দেয়ার। তখন কবি বলেন :–
মানুষকে নিছক তুচ্ছ করে, অহেতুক যারা দেয় অন্যকে কষ্ট তারাও একদিন হায় হায় করে, যখন হয় আপন সৌন্দর্য নষ্ট।