ভারতের ‘দিল সে’ হিন্দি চলচ্চিত্রে নীলগিরি পর্বতে ট্রেনের ওপর শাহরুখ খান ও মালাইকা অরোরাকে ‘ছাইয়া ছাইয়া’ নাচতে দেখেছেন। ওই গান গুলজার লিখেছেন বাবা বুল্লে শাহ’র ‘থাইয়া থাইয়া’ কালামের প্রেরণায়। পাকিস্তানের সুফি গায়িকা আবিদা পারভিনকে গাইতে শুনেছেন, ‘বুল্লে নু সমঝায়ান আয়া’। আবিদা সুফি গানে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। তাঁর স্বামী টেলিভিশনের প্রযোজক ছিলেন। বিবির গান অব্যাহত রাখার জন্য তিনিও চাকরি ছেড়ে ঘর সামলানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। পাঞ্জাবি গায়ক সাঁই জহুর আহমেদ তালি মারা আলখাল্লা পড়ে পাকিস্তানের মাজারে মাজারে গান করেন। তিনি যখন গেয়ে ওঠেন ‘বুল্লে কি জানা মে কোন’, তখন বুকের মধ্যে হুহু করে ওঠে কী যেন, কে যেন!? ভারতের পাঞ্জাবি গায়ক রাব্বি শেরগিল পপ আর রকের ধাঁচে যখন গাইতে থাকেন ‘বুল্লে কি জানা মে কোন’ তখন চঞ্চল মন হয়তো নেচেই ওঠে। কে এই বুল্লে? পাঞ্জাবের সুফি দার্শনিক, সংস্কারক ও কবি বুল্লে শাহ (১৬৮০-১৭৫৭)। পাকিস্তান ও ভারতের ভীষণ প্রিয় তিনি। বাংলা ভাষায় যেমন আমাদের লালন শাহ। বুল্লে শাহ’কে বলা হয় ‘ফাদার অব পাঞ্জাবি এনলাইটেনমেন্ট’। পাঞ্জাবের এই আলোকশিখাকে কিন্তু মরার পর দাফন করতে রাজি হননি মোল্লারা। কাফের ঘোষণা দেন। মুসলমানদের মধ্য থেকে তখন এগিয়ে আসেন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব সৈয়দ জাহিদ হামদানি। তিনি বুল্লে শাহ’র জানাজা পড়ান এবং দাফনের ব্যবস্থা করেন। উজান প্রকাশনের নতুন বই ”বাবা বুল্লে শাহ’র কালজয়ী কালাম”। পাঞ্জাবের সুফি বুল্লে শাহ’র কালামের এই বইটি পল স্মিথের ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন মাহবুব সিদ্দিকী। সিদ্দিকী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বুল্লে শাহ, কবির ও লালনকে নিয়ে তিনি তুলনামূলক গবেষণা করছেন, পিএচডি করছেন বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক, কবি ও অধ্যাপক ড. শামীম রেজার তত্ত্বাবধানে। তাঁর এই অনুবাদ বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন শামীম রেজা।
মাহবুব সিদ্দিকীর লেখার অন্যতম অনুষঙ্গ দর্শন। দর্শনের খোঁজে ঘুরে বেড়ান পাহাড়-প্রান্তর-বন-নদী-সমুদ্র কিংবা জনপদ। জমিন তাঁর স্বচ্ছন্দ্য বিচরণক্ষেত্র– হোক সে মাটির বা কাগজের । অথচ প্রচারের বেলায় প্রচণ্ড অন্তর্মুখী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষণ (ই.এল.টি.) বিষয়ে দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. ফিল গবেষণা সম্পন্ন করেছেন । ‘যা আছে ভাণ্ডে, তা-ই ব্রহ্মাণ্ডে’, ‘নো দাইসেল্ফ’ আর ‘কোথায় পাবো তাঁরে...?' হৃদয়ে রেখে মনে মনে আওড়িয়ে চলেন– পথিকের দেশ নেই, পথ আছে, শেষ নেই ।