মা যখন টুপ করে মরে গেলো আর কাপড়ের পুটুলিতে পেঁচানো মাংসের দলার মতোন মনুকে রেখে গেলো এইটুকু, তখন থেকেই পাখি জানত, তার জন্ম অন্যের ভার কাঁধে নিয়ে চলবার জন্য। কিন্তু তার ভার বইবার এ জগতে কেউ নেই। এই নিয়ে পাখির যে খুব আক্ষেপ ছিল তাও নয়। বরং এসবে তার অভ্যাসই হয়ে গিয়েছিলো। কতদিন ভাতের হাড়ির শেষ ভাতটুকু বাবা আর মনুকে খাইয়ে নিজে ঢকঢক করে দু মগ পানি গিলে বিছানায় শুয়ে পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই! পাশে থাকা বাবা কিংবা মনু তা কখনো টেরই পায়নি। অথচ, সেই পাখিই কিনা বশিরকে পেয়ে লতার মতো এলিয়ে যাচ্ছিল। এই ভালো লাগার অনুভূতির সঙ্গে এর আগে কখনো পরিচয় ছিল না তার। কারণ, পাখি জানত- যে মেয়েটি রাস্তা পার হওয়ার সময় শক্ত কারো হাত খোঁজে, বোতলের ছিপি খুলে দেওয়ার জন্য দৃঢ় কোনো আঙুলের সাহায্য চায় কিংবা আলতো অভিমানে কেঁদে বুক ভাসায়, আর দুঃখ পেলেই লুকাতে চায় কারো চওড়া বুকে, লতার মতো এলিয়ে পড়ে পাশে থাকা পুরুষ বৃক্ষে- সে মোটেই তেমন নয়। দুঃখ ভুলতে কাউকে লাগে না তার। সে নিজেই নিজের আশ্রয়। যতটুকু ওজন তার, তা সে বয়ে নিতে জানে। জানে বাড়তি খানিক কাঁধে তুলে নিতেও। কারণ, জীবন তাকে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু জীবন জানত না, সে সেই পুড়ে যাওয়া ছাইয়ের ভেতর থেকে জেগে ওঠা ফিনিক্স পাখি! হার না মানা: আগুনডানা: মেয়ে।
স্নাতকোত্তর, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সাদাত হোসাইন নিজেকে বলেন গল্পের মানুষ। তাঁর কাছে চারপাশের জীবন ও জগত, মন ও মানুষ সকলই গল্প। তিনি মনে করেন, সিনেমা থেকে পেইন্টিং, আলোকচিত্র থেকে ভাস্কর্য, গান থেকে কবিতা- উপন্যাস-নাটক, সৃজনশীল এই প্রতিটি মাধ্যমই মূলত গল্প বলে। গল্প বলার সেই আগ্রহ থেকেই একের পর এক লিখেছেন- আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, নির্বাসন, ছদ্মবেশ, মেঘেদের দিন ও অর্ধবৃত্তের মতো তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘কাজল চোখের মেয়ে’, তোমাকে দেখার অসুখ'সহ দারুণ সব পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বোধ, দ্য শুজ, প্রযত্নের পাশাপাশি' নির্মাণ করেছেন 'গহীনের গান' এর মতো ব্যতিক্রমধর্মী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, পশ্চমিবঙ্গের চোখ সাহত্যি পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা ও এক্সিম ব্যাংক- অন্যদিন হুমায়ূন আহমদে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯। তাঁর জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার, কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে।