আত্মশুদ্ধি বা নফসের সংশোধন মানব সমাজের এক ব্যাধি। এ ব্যাধি মূলত প্রতিটি মানুষের ভিতর থাকে যা সংশোধনের প্রয়োজন হয় একজন অভিভাবকের মাধ্যমে। এই অভিভাবককে আমরা কয়েটি পরিভাষায় জানি, পীর, শাইখ ইত্যাদি। একজন মুসলমান সমস্ত গোনাহ থেকে মুক্ত থেকে ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে একজন হক্কানী আলেম-উলামা, পীর, শাইখের মুহতায। নিশ্চয় সফলকাম তারা যারা আত্মশুদ্ধি করেছে। এবং তার প্রতিপালকের নামে নামায আদায় করে। বাস্তবিকই তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দাও। অথচ আখেরাতের জীবনই শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। অবশ্যই সে সফল হয়েছে, যে নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তা বিনষ্ট করেছে। জেনে রাখ, নিশ্চয় দেহে একটি পিও আছে। সেটি যখন ঠিক হয়ে যায়, পুরো দেহ ঠিক হয়ে যায়। আর যখন সেটি নষ্ট হয়ে যায়, পুরো দেহই নষ্ট হয়ে যায়। জেনে রাখ, সেই পিটি হল কলব। আমরা সবাই কোনো না কোনো আলেমের মত অনুযায়ী চলতে চেষ্টা করি। এ চেষ্টাকেই আত্মশুদ্ধি বা তাসাউফ বলে। সুতরাং আত্মশুদ্ধি প্রতিটি মানুষের জন্য প্রয়োজন। সাহাবায়ে কেরামকে আল্লাহ তায়ালা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির পাথেয় দান করেছেন। আর যুগ যগ ধরে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে আলেম-উলামাদের ওপর এ দায়িত্ব আর্পিত। কারণ, আলেম- উলামাগণই নবীজির উত্তরসূরী।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।