প্রধান চরিত্র ফরিদ নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসের কাহিনি তৈরি হলেও এর মূল বিষয় মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের ঘটনাবলি, সব না হলেও প্রধানগুলো। মুক্তিযুদ্ধের পর ওপর ওঠার সুযোগ-সুবিধা নিতে অস্বীকার করে এবং আগ্রহ না দেখিয়ে ফরিদ ব্যতিক্রমী হলেও ক্ষমতার অধিকারী যারা তারা যে স্বাধীনতাকে নিজের স্বার্থেই ব্যবহার করছে এবং তার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকৃত হয়ে গিয়েছে, সেই কথা উপন্যাসে উঠে আসে বার বার ঘটনার বর্ণনায় এবং সংলাপে। এই উপন্যাস সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের মধ্যেও একজন জেদি মানুষের আদর্শ ধরে রাখার বলিষ্ঠ কাহিনি। চিত্র শিল্পী হওয়ার জন্য পড়াশোনা শেষ না করলেও ফরিদ ছবি আঁকে সাধারণ মানুষের জন্য। রিকশার পেছনে সে প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ছবি আঁকে, তারপর মুক্তিযুদ্ধের সুফল মুষ্টিমেয়র দ্বারা অপহৃত হতে দেখে সেই ছবি বাদ দিয়ে শুরু করে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের ছবি আঁকা। সবাইকে বলে, এখন সিনেমা দেখার দিন। মুক্তিযুদ্ধ শেষ। সবাই সিনেমা দেখ। শেষ পর্যায়ে এসে সে শুরু করে মহুয়া, মলুয়া, এইসব লোকাহিনির নায়িকার ছবি আঁকা যা তাকে দেশে এবং দেশের বাইরে খ্যাতি এনে দেয়। এর ফলে তার জনপ্রিয়তা বাড়লেও জীবনযাপনে কোনো পরিবর্তন আসে না, দৃষ্টিভঙ্গিও একই থাকে। এক বড়লোকের মেয়ে ভালোবেসে তাকে বিয়ে করলেও তার জেদের জন্য ছেলেসহ একদিন ছেড়ে চলে যায়। পাড়ার মানুষ আর কিশোরদের কাছে সে সব সময়ই হিরো-ওস্তাদ। যখন সে দুরারোগ্য রোগে মৃত্যুবরণ করে তার আগেই সে কিংবদন্তির চরিত্র হয়ে গিয়েছে। কথ্য ভাষায় লেখা এই উপন্যাস সবদিক দিয়েই ব্যতিক্রমী।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।