গল্প বুনে যায় সুন্দরের সবুজ , সর্বনাশের হলাহল আর বেদনার নীল। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ বুকের গভীরে, চিন্তা ও চৈতন্যের জলতরঙ্গে অজস্র গল্প নিয়ে জন্ম নেন, বেড়ে ওঠেন এবং বেচেঁ থাকেন। 'গল্প যখন সত্যি হয়' গল্পগ্রন্থের লেখিকা সোনালী দাসও এর ব্যতিক্রম নন। তাঁর সাতাশটা গল্প ধারণ করে সপ্তর্ষি থেকে প্রকাশিত হলো ‘গল্প যখন সত্যি হয়’ গল্পগ্রন্থটি। গল্পগুলো পড়ে মনে হলো, লেখিকার উষ্ণ হৃদয়ে ফেলে আসা দিন-রাত্রির স্মৃতি কবুতরের ডানায় উড়ে বেড়ায়। প্রকৃতপক্ষে, স্মৃতি ও গল্প একই সত্তার যমজ প্রকাশ। ছোটো ছোটো সহজ বাক্যে তিনি তৈরি করেছেন প্রতিটি গল্প-আত্মার প্রতিকৃতি। এ বইয়ের প্রথম গল্প ‘টিউলিপ’। গল্পের প্রধান চরিত্র টিউলিপ, ফুলের মতোই সুন্দর। প্রেম করে বিয়ের পরপরই বঝুতে পারে স্বামী প্রতারক। তাই দু-সন্তানের মা টিউলিপ একসময় বাধ্য হয়ে খুজেঁ নেয় বিকল্প পথ। এ গল্পে গল্পকার খুব যত্নে এক যন্ত্রণাদগ্ধ মা টিউলিপকে ফুটিয়ে তুলেছেন। সংসারে নারীদের একই শরীরে ধারণ করতে হয় অনেকগুলো প্রকল্প। এ বাস্তবতার নিরিখে বইয়ের দ্বিতীয় গল্প ‘তেতো অধ্যায়’ আমাদের দেখিয়ে দেয় - শ্রবণার অন্তরের রোদন, সন্তানের প্রতি গভীর মমতা, আবার চাকরির প্রতি দায়বোধ- কীভাবে বভুুক্ষু সময়ের মানচিত্রে দাগ রেখে যায়। সমুদ্র মানুষের মনের বন্ধ দরজা খুলে দেয়। ‘সমুদ্রস্নান’ গল্পের ডালপালার বিস্তারে মানষু ও সমুদ্রকে একাকার করে এক অনন্য গল্প এঁকেছেন লেখিকা। দু-বোনের শৈশবের গল্প 'সহোদরা'- এমন স্মৃতিভারাতুর করে লেখা, যা পড়তে পড়তে মনে হয়, গল্পটি আমার, আপনার সকলের। 'কমল’ এ গ্রন্থের শেষ গল্প। গল্পের প্রধান চরিত্র কমল- বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, মেধাবী ও সুন্দরী। ডাক্তারি পড়াকালেই এক কলেজ প্রভাষকের সাথে তার বিয়ে হয়। প্রথম দুমাস স্বপ্নঘোরেই কাটে। তারপরেই সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। লেখিকা দক্ষ তিরন্দাজের মতোই স্বামীর ভদ্রমুখের মুখোশটা খুলে দিয়েছেন 'কমল' গল্পের আখ্যানে। বইয়ের প্রতিটি গল্পই এমন অনুভূতির মায়াজালে অধীত চেতনালোকের কাঁটায় তুলে ধরেছেন মেধাবী গল্পকার সোনালী দাস। ‘গল্প যখন সত্যি হয়’ বইটির সাফল্য কামনা করছি।