ছোটদের ইসলামী ইতিহাস মূল : সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. অনুবাদ আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষদের জন্মস্থানও এ নগরী। তখন এখানকার বাসিন্দারা ছিল মূর্তিপূজারী। তারা জাহেলী সংস্কৃতি অনুযায়ী জীবন যাপন করত। সে জীবন ছিল আল্লাহ তাআলার অপছন্দের। কারণ, সে জীবনে ছিল পৌঁত্তলিকতা, মূর্খতা, একগুয়েমি ও জুলুম-নির্যাতনে ভরা। এমনি এক ক্লান্তিলগ্ন মুহূর্তে মহান আল্লাহ তার প্রিয় বন্ধু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসুল হিসেবে তাদের মাঝে পাঠালেন। তখন তাঁর বয়স ছিল চল্লিশ। আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে প্রিয় রাসূলকে আদেশ করেন, যাতে তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে তাওহীদের দিকে, সত্য ধর্মের দিকে এবং উত্তম চরিত্রের দিকে আহŸান করেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওহীদ ও রেসালাতের দাওয়াত শুরু করার পর মক্কার বাসিন্দারা বিরোধিতা করে এবং শত্রæতায় মেতে ওঠে। কারণ তাদের নিকট এ আহŸান ও আকিদা-বিশ্বাস মনোপুত হয়নি এবং এসব ভালো কথা তাদের কাছে ভালো লাগেনি। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলকে মদীনায় হিজরত করার হুকুম দেন। আল্লাহর হুকুম পেয়ে তিনি তার একনিষ্ঠ সাথী আবু বকর রাযি.কে সঙ্গে নিয়ে অতি গোপনে মক্কা থেকে মদীনার পথে বের হয়ে যান। সংবাদ পেয়ে মক্কার মূর্তিপূজারী মুশরিকরা তাঁদের পিছু নেয়। এদিকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রাযি. মুশরিকদেরকে দ্বিধাগ্রস্থ করে দেয়ার জন্য মদীনার উল্টোপথে কিছু দূর গিয়ে ‘গাড়ে ছওর’ নামক এক পর্বতগুহায় আশ্রয় নেন। তাঁদের হেফাজতের জন্য আল্লাহ তাআলা সেখানে পাঠিয়ে দেন মাকড়সাবাহিনীকে। মাকড়সার দল সেখানে গিয়ে গুহা ও এর পার্শ্ববর্তী গাছের মাঝে বুনে ফেলে এক ঘন বিস্তৃত জাল। এ জাল গুহায় আশ্রিত প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রাযি. এর জন্য কাফেরদের দৃষ্টির আড়ালস্বরূপ ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে দুটি বন্য কবুতর আল্লাহর হুকুমে কোত্থেকে যেন এসে গুহার আশেপাশে উড়তে থাকে এবং তাঁদের স্বভাব অনুযায়ী ডাকতে থাকে। যার ফলে তারা বুঝে নিয়েছিল যে, এ গুহায় অনেকদিন কেউ প্রবেশ করেনি। কুরআনের বাণীই চিরসত্য- “জমিন ও আকাশ; জগতের সমস্ত কিছু আল্লাহর আয়ত্বধীন।” (সূরা ফাতাহ: ৪) এদিকে মূর্তিপূজারী মুশরিকরা তাদের খোঁজে গুহার মুখ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তারা এত কাছে পৌঁছে গিয়েছিল যে, তাঁদের কেউ নিজের পায়ের দিকে তাকালেই হয়ত গুহায় আশ্রিত তাদের কাক্সিক্ষত ব্যক্তিদ্বয়কে দেখে ফেলত। কিন্তু আল্লাহ তাদের সে সুযোগ দেননি। ফলে তারা সেখানে এসে দিকভ্রান্তের মত সমস্যায় পড়ে যায়। তারা বলতে থাকে, মদীনার যাত্রীরা কোথায় হাওয়া হয়ে গেল? ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।