কবিতা সাহিত্যের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আর সাহিত্য সমাজের দর্পণ। তবে কবিতা সাহিত্যের অন্যতম শিল্পমাধ্যম হিসেবে সময়ের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারছে সেটাও বোঝার বিষয়। সমাজ ও মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতা ছাড়া এটা হয় না। জগতে সব কিছুই গতিশীল। পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনই সত্য। সমাজের ভেতর ঘটে যাওয়া অসংগতি, বৈষম্যকে যিনি শৈল্পিকতায় রূপ দেন তিনিই কবি। মানুষের কবি। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার জন্য কারাবাস করেছেন। কিন্তু তাঁর কলম থামেনি। সুকান্ত বঞ্চিত মানুষের ছবি এঁকেছেন কবিতায়। জীবনানন্দ লিখে গেছেন-- ‘যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি এখনও যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয় মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।’ সমাজে পঁজির অসম বিকাশ তৈরি করছে বৈষম্য। সভ্যতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। পৃথিবীতে এখনও দাসপ্রথা আছে। আছে পতিতাবৃত্তি-খুন-ধর্ষণ আর যুদ্ধ। কিছুই পাল্টায়নি। পাল্টায়ও না। অনুজীবের মত অপরাধের ধরন পাল্টায়। অপরাধ টিকে থাকে পৃথিবীর বয়স অবধি। সময়ের এই প্রেক্ষাপটে সৃষ্টিশীল অনেক মানুষেরা চলতি স্রোতে গা ভাসালেও তার মধ্যেই জন্ম নিচ্ছে ‘ঈশ্বরের চোখ দুর্বৃত্তের পকেটে’। সামাজিক দায় বহন করে কবিতা লেখেন বিলকিস ঝর্ণা। তার কবিতা শুধু কবিতা নয় শ্রেণি সংগ্রামে উজ্জীবিত শব্দমালা। বইয়ের কবিতাজুড়ে এক নির্মেঘ সত্যের ভেতর ছুঁড়ে ফেলা লেখকের মানবিক বোধ বা দায়। যা উৎরাতে পারেনি সামাজিক হয়ে থাকার মোহকে। নিজেকে তাই অবশেষে দাঁড় করিয়েছেন কাঠগড়ায়।