কিছু কথা আমরা অনেকেই মনে করি, পৃথিবীতে এসেছি অন্যান্য প্রাণীর মতো বেঁচে থাকার জন্যই। তবে যেহেতু আখেরাতকে বিশ্বাস করি, আল্লাহকে বিশ্বাস করি; সুতরাং নামায-রোযা, জিকির-তেলাওয়াত, ধ্যান-জ্ঞান ইত্যাদি আমল করে কোনোরকমে জীবন পার করে দিলেই জীবনের উদ্দেশ্য অর্জন হয়ে যাবে। আর উপার্জন করে, সংসারের ভরণপোষণ দিয়ে, মসজিদে, মন্দিরে, সীনাগগে, প্যাগোডায় প্রার্থনা করে জীবন পার করে দেওয়াই হচ্ছে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য এবং এটা করেই আমরা জান্নাত বা স্বর্গে চলে যাব। কিন্তু এ ধারণা মোটেও সঠিক নয়। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, “মানুষ কি মনে করে যে, আমরা ঈমান এনেছি বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্যবাদী এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী।” (সূরা আনকাবুত : ২-৩) আল্লাহ তায়ালার কুদরত অসীম। তিনি মানুষকে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের বিপদ ও মসিবত দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন। সৃষ্টির সূচনা থেকেই চলে আসছে এ পদ্ধতি। আলোচ্য আয়াত তারই ইঙ্গিত বহন করছে। তাই বিপদ-আপদ ও মুসিবতের সময় মুমিনদের কর্তব্য হলো ধৈর্যধারণ করা ও আল্লাহ তায়ালার সকল সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা, তার রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া এবং সৎকর্ম করে যাওয়া। এটাই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। অতএব, আমাদের মনে রাখতে হবে, মানব চরিত্রের উত্তম গুণাবলির অন্যতম হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।” (সূরা আসর: ১-৩) এই সূরার শেষে আল্লাহ ধৈর্যকে সাফল্যের নিয়ামকরূপে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।” (সূরা আলে ইমরান: ২০০) ধৈর্য ধারণকারীর সাফল্য সুনিশ্চিত, কারণ আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য ধারণকারীর সঙ্গে থাকেন; আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার সঙ্গে থাকবেন, তার সফলতা অবধারিত। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।” (সূরা বাকারা: ১৫৩) মহান আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন, “আমি তোমাদিগকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” (আমরা তো আল্লাহর এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।) (সূরা বাকারা: ১৫৫-১৫৭) আমরা সাধারণত বিপদাপদ ও বালা-মসিবতে বিচলিত না হওয়াকেই ধৈর্য বলে মনে করি। মূলত ধৈর্য অনেক ব্যাপক অর্থ ধারণ করে। অর্থাৎ ধৈর্য তিন প্রকার। যথা- ১. অন্যায়-অপরাধ হতে বিরত থাকা। ২. ইবাদত, আল্লাহর আনুগত্য ও সৎকর্মে কষ্ট স্বীকার করা। ৩. বিপদে অধীর না হওয়া। কোন ব্যক্তি যদি উপরোক্ত অর্থে ধৈর্য অবলম্বন করে, তবে তার জীবনে পূর্ণতা ও সফলতা অনস্বীকার্য। কারণ হল- প্রথমতঃ অন্যায়-অপরাধ তথা পাপকার্য থেকে বিরত থাকা সকল প্রকার অকল্যাণ ও গøানি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়। দ্বিতীয়তঃ ইবাদত ও সৎকর্ম সম্পাদন করা সফলতার একমাত্র সোপান। তৃতীয়তঃ প্রতিক‚লতায় দৃঢ়পদ থাকা- লক্ষ্যে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম। সুতরাং পরিপূর্ণ ধৈর্যই মানবজীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে। তাই আমাদের উচিত, সর্বাবস্থায়, যেকোনো অযাচিত পরিবেশ ও অনাহূত পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়া ও আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করা। তবেই আল্লাহর সাহায্য আমাদের সাথী হবে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গী হবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন। -অনুবাদক
Dr. Ayez Al Karni ১৩৭৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৫৯ ইং সনে দক্ষিণ সৌদী আরবের করন জেলার আশ-শুরাইহ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন্ অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন রিয়াদে। উচ্চতর পড়াশুনা করেন প্রাদেশিক শহর আবহায়। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত অধ্যায়নের পরিধি সুবিস্তৃত ও অতুলনীয়। ড. আয়েয আল করনী এ পর্যন্ত বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে আত-তাফসীরুল মুয়াসসার, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, আশিক, লা তাহযান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ড. করনী দাওয়াতের উদ্দেশ্য লেখালেখি, বক্তৃতা-বিবৃতি ও গ্রন্থরচনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, গুগলপ্লাস ও ইউটিউব ইত্যাদিতেও সমানভাবে সক্রিয়। তাঁর বক্তৃতার ক্যাসেটের সংখ্যা হাজার ছড়িয়ে গেছে।