ভ‚মিকা সকল প্রশংসার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তাআলা। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবারবর্গ ও সাহাবায়ে কেরামের ওপর। আমার মনের একান্ত আশা হলো, পাঠক মহল আমার এ গ্রন্থ দ্বারা বেশ উপকৃত হবেন। তবে পাঠক পুরো গ্রন্থটি অধ্যয়নের পূর্বেই বিচার-বিশ্লেষণ করতঃ এ বইটির গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারবেন; যদি এতে ভালোবাসার দৃষ্টি দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ওহীর আলোকে এবং সঠিক যুক্তি ও নীতি দ্বারা যেন এর বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। পাশাপাশি এ কথাও স্মরণ রাখা চাই যে, কোনো বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ না জেনে শুধু পড়াশোনার ওপর নির্ভর করেই কোনো মন্তব্য পেশ করা একেবারেই অনুচিত। আমি নি¤েœ এ গ্রন্থের একটি রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যার ফলে অবশ্যই এ গ্রন্থ সম্পর্কে আপনার মনে সুধারণা সৃষ্টি হবে বলে আশা রাখি। কারণ যারা দুঃখ-বেদনার মাঝেই জীবনযাপন করছেন কিংবা সংকটাপন্ন হয়ে দুঃখিত ও বিষণœ অবস্থায় বিনিদ্র-রজনী অতিবাহিত করছেন; আমি এ গ্রন্থটি তাদের জন্য লিখেছি। এতদসংক্রান্ত রোগাীর চিকিৎসার জন্য কুরআন-সুন্নাহ, মর্মভেদী সত্য ঘটনা এবং শিক্ষামূলক সত্য গল্প-কাহিনি থেকে ওষুধের উপকরণ ও পথ্য সংগ্রহ করে এ গ্রন্থের প্রতিটি পাতা আমি অলংকৃত করার চেষ্টা করেছি। এ গ্রন্থ আপনাকে আনন্দ দান করবে। আপনাকে সুখী হবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে। আপনাকে আশাবাদী হতে শেখাবে। সুখে থাকার পাথেয় সংগ্রহকরণে আপনাকে সঙ্গ দেবে। এমনকি এ গ্রন্থটি আপনার যেভাবে জীবন যাপন করা উচিত, সেভাবেই আপনাকে জীবন যাপনের পথ দেখিয়ে দেবে। ফলে আপনি জীবন যাপন করতে পারবেন সজীবভাবে, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রফুল্লতার সাথে। ইনশাআল্লাহ, এ গ্রন্থটি আমাদের সেসব ভুলসমূহ নিরূপণ করে দেবে, যেসব ভুল আমরা দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনার কারণে সঠিক নির্দেশনা না মেনে করে ফেলি। উপরন্তু তা সহজ-সরল ও সাধারণ নীতির বিপরীত; যেসব নীতি দ্বারা মানবজাতি পরিচালিত। সর্বশক্তিমান মহান রাব্বুল আলামিন এ জীবনে আমাদেরকে যে পথে চলার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন, সেপথে অটল থাকতে এ গ্রন্থ আমাদেরকে সুরক্ষ দূর্গের মতোই সংরক্ষণ করবে। অথচ এটি আপনাকে এমন স্থান থেকেই আহŸান করছে, যা আপনার স্মৃতিপটে বিদ্যমান। অতএব, আপনার প্রতিভাকে আপনার বিশ্বাস করা উচিত। আপনার প্রতিভাকে উন্নত করা আপনারই দায়িত্ব ও কর্তব্য। সুতরাং আপনার উচিত, এ জীবনের অশুভ উত্থান-পতনের কথা ভুলে গিয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে, সৌভাগ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া। আমি আপনাদের সম্মুখে এ গ্রন্থটির কয়েকটি বিশেষ ও উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করছি- ১. এ গ্রন্থটি আপনাকে আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার কথা, আল্লাহর ওপর অকৃত্রিম বিশ^াস ও ভাগ্যলিপির প্রতি বিশ^াস স্থাপনের কথা এবং বর্তমান জীবন-যাপনের উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর অসংখ্য করুণার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। ২. এ গ্রন্থের বিবরণ ও বর্ণনাপদ্ধতি যে কোনো দুশ্চিন্তা, বিষণœতা, দুঃখ-বেদনা, ব্যর্থ মনোভাব ও হতাশা দূরীকরণে চেষ্টা করবে। ৩. আল্লাহর বাণী, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস, বাস্তব গল্প-কাহিনি ও শিক্ষামূলক সত্য ঘটনাবলি এবং বিজ্ঞজনদের প্রবাদ-প্রবচন থেকে যা কিছু আমি এ গ্রন্থে আলোচ্য বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মনে করেছি, তা-ই এখানে লিপিবদ্ধ করেছি। এ গ্রন্থে হিতোপদেশ, কষ্ট-যাতনা বা রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি আমন্ত্রণ করার পাশাপাশি পরম সুখের দিকে এগিয়ে নেয়ার আহŸানও জানানো হয়েছে। ৪. এ গ্রন্থ শুধু মুসলিম পাঠকদের জন্যই নয়। বরং এটি সর্বসাধারণের যে কোনো ধর্মাবলম্বীর জন্যই উপযোগী। এ গ্রন্থটি লেখার সময় আমি প্রত্যেকের আবেগ-অনুভূতির কথা বিবেচনা করেছি। তবে তা সত্তে¡ও আমি এ গ্রন্থটি সহজাত সত্যধর্মের ভিত্তিতেই রচনা করেছি। ৫. এ গ্রন্থে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের লেখক ও দার্শনিকদের শিক্ষণীয় প্রবাদবাক্য উল্লেখ করা হয়েছে। আর সে কারণে আমি নিজেকে অপরাধী বলে মনে করি না। কারণ প্রজ্ঞা প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রেই কাম্য; যেখানেই তা পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই সেটিকে সংগ্রহ করা উচিত। ৬. কোনো প্রকার বাধা-বিপত্তি ছাড়াই গভীর মনোযোগসহ পাঠ করার ক্ষেত্রে খুবই সহজ ও সাবলীল ভাষায় লিখিত একটি বই। ৭. কয়েক শতাব্দী পূর্বের লেখকদের অনুকরণ করতঃ এ বিশেষ গ্রন্থে আমি ঘটনার উৎসের আলোচ্য অংশটুকু উল্লেখ করেছি। আর অন্যান্য বৈচিত্রময় ঘটনার মূল কথাকে সংক্ষেপে সহজবোধ্য করে উল্লেখ করেছি। ৮. আলোচিত আয়াতের ক্ষেত্রে আয়াতের নাম্বার ও হাদিসের উৎস উল্লেখ করেছি। তবে কোনো হাদিস গ্রহণযোগ্য হবার ক্ষেত্রে দুর্বল হলে আমি তা চিিহ্নত করে দিয়েছি। অর্থাৎ হাদিসটি নির্ভরযোগ্য হলে তা বর্ণনা করে দিয়েছি নয়তো নীরব থেকেছি। তবে এ সবকিছু করেছি সংক্ষেপের জন্য। বিঃদ্রঃ এ গ্রন্থটি পাঠ করার সময় পাঠককে অবশ্যই উল্লেখিত বিষয়সমূহ মনে রাখতে হবে। পরিশেষে আরেকটু স্পষ্ট করে বলি যে, এ গ্রন্থটি বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের জন্য রচিত হয়নি; বরং এটি প্রত্যেক ওই ব্যক্তির জন্য, যে সুখী-সমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে আগ্রহী। কবি বলেন- ورصعت فيه الدر حتى تركته * يضئ بلا شمس ويسرى بلا قمر তার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছি মুক্তোমালা, সূর্য ছাড়াই সে বিলায় আলো এবং চন্দ্র ছাড়াই সে রাতকে করে আলোকিত। فعيناه سحر والجبين مهند * ولله در الرمش والجيد والحور তার চক্ষুদয় ছিল জাদুময় এবং তার কপালের ভাঁজ যেন ধারালো অস্বী সদৃশ। কতইনা সুন্দর তার আঁখিপল্লব ও চোখের মণি, কত সুন্দর তার সেই গ্রীবাদেশ।
Dr. Ayez Al Karni ১৩৭৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৫৯ ইং সনে দক্ষিণ সৌদী আরবের করন জেলার আশ-শুরাইহ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন্ অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন রিয়াদে। উচ্চতর পড়াশুনা করেন প্রাদেশিক শহর আবহায়। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত অধ্যায়নের পরিধি সুবিস্তৃত ও অতুলনীয়। ড. আয়েয আল করনী এ পর্যন্ত বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে আত-তাফসীরুল মুয়াসসার, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, আশিক, লা তাহযান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ড. করনী দাওয়াতের উদ্দেশ্য লেখালেখি, বক্তৃতা-বিবৃতি ও গ্রন্থরচনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, গুগলপ্লাস ও ইউটিউব ইত্যাদিতেও সমানভাবে সক্রিয়। তাঁর বক্তৃতার ক্যাসেটের সংখ্যা হাজার ছড়িয়ে গেছে।