অনুবাদকের কথা পৃথিবীতে এমন কোন বিষয় নেই, যে বিষয়ে জগতের সকল মানুষ একমত হতে পেরেছে। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ যে কোন বিষয় নিয়ে মান আপোষে মতনৈক্য করেছে। এমনকি সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর অস্তিত নিয়েও এক শ্রেণীর মানুষ মতনৈক্য করতে পিছপা হয়নি। কিন্তু একটি মাত্র বিষয়, যে বিষয়টির ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। পৃথিবীর সকল মানুষ যার বাস্তবতার ক্ষেত্রে একমত। কোন মানুষই যে বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করতে আজও সক্ষম হয়নি, সেটি হচ্ছে মৃত্যু। মানব জীবনের চরম বাস্তব ও চূড়ান্ত সত্য এই মৃত্যু। পবিত্র কুরআন ঘোষণা করেছে প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।' কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো মৃত্যু যে পরিমাণ নিশ্চিত ও বাস্তব, মৃত্যুর ব্যাপারে আমাদের উদাসীনতা যেন তার চেয়েও বেশি। প্রতিদিন আমরা আত্মীয়-প্রিয়জন তথা কাউকে না কাউকে এই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখী হতে দেখি। সমাধিস্ত হতে দেখি সাড়ে তিন হাত মৃত্তিকার অন্ধকার কুটরীতে। প্রিয়জন হলে তার বিরহ-বেদনা ও শশাকে মুহ্যমান হই। চোখের অশ্রæ ফেলে বিলাপ করি। কিন্তু এত কিছুর পরও ক’জন আমরা নিজের মৃত্যুর কথা একটিবারের জন্য স্মরণ করি? হাতের মাটি ঝেড়ে, চোখের অশ্রæ মুছে পুনরায় আমরা পার্থিব কর্মব্যস্ততায় জড়িয়ে পড়ি। তাই হযরত আলী রাযি. বলতেন - ‘মানুষ প্রতিদিন তার মত মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে দেখে কিন্তু সে নিজের মৃত্যুর কথা ভুলে যায়। মৃত্যুর ব্যাপারে এই উদাসীনতাই মূলত আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সমূহ অকল্যাণ ডেকে আনছে। কারণ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে যে মানুষগুলোর দ্বারা অশান্তি, অমানবিকতা, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিষ বাষ্প ছড়াচ্ছে, তাদের মনে যদি মৃত্যুর কথাটি সর্বদা জাগরুক থাকত, তাহলে তাদের দ্বারা আদৌ অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হত না। দগ্ধ হত না সমাজ অশান্তির দাবানলে। দূষিত হত না আমাদের পরিবেশ। এ জন্যই আল্লাহওয়ালাগণ কষ্ট-সাধনা করে হলেও প্রতি দিন অন্তত: একবার মৃত্যুর মোরাকাবা বা ধ্যান করতে বলে থাকেন। কারণ এই জীবন ক্ষণস্থায়ী। মৃত্যুর পর যে অনন্ত জীবনের সূচনা হবে যে জীবনের তুলনায় এর কোন মূল্যই নেই। সুতরাং সেই অনন্ত জীবনের অবলম্বন সগ্রহ করা প্রতিটা মুমিনের অবশ্যকরণীয়। তবে সে অনন্ত জীবন সম্পর্কে যার বিশ্বাস যত দৃচ, সে জীবনের অবলম্বন সংগ্রহ তার জন্য তত সহজ। আর যে কোন বিষয়ে বিশ্বাস দৃচ করার পূর্বে প্রয়োজন সে বিষয়ের সম্যক ধারণা ও জ্ঞান লাভ করা। মৃত্যুর স্মরণ’ পরকালের ভাবনা ও। জান্নাতের দৃশ্য আল্লামা তকী উসমানী সাহেবের তিনটি বয়ান। আশাকরি বয়ান তিনটি পাঠকদের মনে সংশ্লীষ্ট বিষয়ে মোটামুটি একটি ধারণা ও জ্ঞান প্রদানে সক্ষম হবে এবং সর্বদা মনে মৃত্যু ও পরকালের ভাবনা। জাগ্রতা রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। নাদিয়াতুল কুরআন। ফাউন্ডেশন-এর সযতœ সহযোগিতায় আল্লামা তকী উসমানী সাহেবের মুল্যবান বয়ানগুলো পাঠকদের খেদমতে উপস্থাপন করতে পেরে মহান আল্লাহর দরবারে অশেষ শোকর জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের মনে সর্বদা মৃত্যুর কথা স্মরণ রেখে পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে সচেতন হওয়ার তাওফিক এনায়েত করুন। আমীন।