পিতা-মাতার প্রতি লেখকের আবেদন মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ . অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ অন্তরবিশিষ্ট কঠোর প্রকৃতির ফেরেশতারা। তারা আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হয় না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। (সূরা তাহরিম: ৬) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সন্তানের বয়স যখন সাতবছর পূর্ণ হয়, তখন তোমরা তাদেরকে নামাজের আদেশ করো। দশ বছর বয়সে উপনীত হলে নামাজের জন্য তাদেরকে (প্রয়োজনে) প্রহার করো এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও। (আবু দাউদ: ৪৯৫, মুসনাদে আহমাদ: ২/১৮৭) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, যে ব্যক্তি। তিনজন কন্যাসন্তান লালন-পালন করল এবং তাদের শিষ্টাচার শিক্ষা দিলো, বিবাহ দিলো ও তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করল, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৪৭) উল্লেখিত আয়াত ও হাদিসদ্বয় এ কথার ওপর সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করছে যে, পিতা-মাতার ওপর সন্তানের হকসমূহের মধ্য হতে একটি গুরুত্বপূর্ণ হক হলো, পিতা-মাতা সন্তানদের যথেষ্ট পরিমাণ ধর্মীয় জ্ঞান, সৎ চরিত্র গঠন এবং সামাজিক শিষ্টাচার সম্পর্কে শিক্ষা দেবে। যেমন, পিতামাতার জন্য আব্যশক হলো, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সন্তানের কানে আযান দেওয়া, সপ্তম দিনে ভালো নাম রাখা, মাথা মুÐানো, আকিকা করা এবং উপযুক্ত সময়ে সুন্নাতে খতœা করা ইত্যাদি। এমনিভাবে তাদের ওপর আব্যশক হলো শৈশবেই তাদের কুরআনুল কারীম শিক্ষা দেওয়া। পাশাপাশি ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহ শিক্ষা দিয়ে তা পালনে অভ্যস্ত বানানো। ইসলামী শরীয়তের সমস্ত বিধি-বিধান ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া। অর্থাৎ, খাওয়া-দাওয়া, ওঠা-বসা, চলা-ফেরা এবং অন্যদের সাথে মেলা-মেশার আদব ও সুরুচী শিক্ষা দেওয়া। এসব বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিবে, এমনিভাবে হযরত জাবের রাযি. গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তিনি নিজ সন্তানদের এবং ছোট ছোট এতীম বোনদের শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ বিধবা মহিলাকে বিবাহ করলেন। জাবের রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী খবর, তুমি নাকি বিবাহ করেছ? উত্তরে আমি বললাম জি, হ্যা! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কুমারী না বিধবা? আমি বললাম বিধবা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কুমারী মহিলাকে বিবাহ করলে না কেন, সে তোমার সাথে খেলা করতো আর তুমিও তার সাথে খেলা করতে! (সে তোমাকে আন্তরিকতার সাথে ভালোবাসত, তুমিও তাকে মন উজাড় করে ভালোবাসতে?) আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ওহুদ যুদ্ধে আমার পিতা শাহাদাত বরণ করেছেন। তিনি নয়টি কন্যা সন্তান (কোনো বর্ণনায় ছয়টি) রেখে গেছেন। এমতাবস্থায় আমার কাছে ভালো মনে হলো না যে, আমি আমার বোনদের মতই একজন আনাড়ি অনভিজ্ঞ মহিলাকে বিবাহ করি; বরং আমি সমিচীন মনে করলাম একজন অভিজ্ঞ মহিলাকে বিবাহ করি, যে তাদের দেখভাল করবে এবং লালনপালন করবে, শিষ্টাচার শিক্ষা দিবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ঠিক করেছ। (সহীহ বুখারী: ২৩০৯)